নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন যে তিনি চান রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য আরও কিছু করুক যারা অনুভব করেছেন যে সরকার তাদের সামান্যই দিচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মতে, যে রাজনৈতিক উত্থান দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পতন ঘটিয়েছিল, তার এক বছর পরেও মানুষ সরকারকে শত্রু হিসেবেই দেখে।
তিনি বলেন, গ্রাম থেকে সরকার পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি নির্মূল করাই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে মানুষ একটি ‘নতুন বাংলাদেশে’ বিশ্বাস করতে পারবে।
তার মতে, ব্যাপক দুর্নীতি সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি সদস্যরা অর্থ আত্মসাৎ করছে এবং পাসপোর্ট তৈরি থেকে শুরু করে ব্যবসার অনুমতি পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে ঘুষ দাবি করা হচ্ছে।
ইউনূস আরও বলেন, ‘কেউ না কেউ সবসময় বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ সরকারকে তাদের স্থায়ী শত্রু হিসেবে দেখে এবং এই শত্রুর সাথে লড়াই করেই তাদের জীবন কাটাতে হয়। এটি একটি খুব শক্তিশালী শত্রু, তাই মানুষ এর থেকে দূরে থাকতে চায়।’
যদিও এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ থেকে, যা তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মিত্রদের সুবিধা দিচ্ছিল। তবে এর পাশাপাশি উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় এবং তরুণদের জন্য সুযোগের অভাব নিয়েও অসন্তোষ ছিল।
হাসিনা ক্রমবর্ধমানভাবে কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিলেন, বিরোধী দল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছিলেন। অন্যদিকে, ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে অভিজাত শ্রেণীর দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়েছে।
ইউনুস বলেন, আমাদের শুরুর অবস্থা ছিল এক বিধ্বস্ত অর্থনীতি, এক বিধ্বস্ত সমাজ। প্রশাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল,’ বলেন ইউনূস। ‘আমরা বিল পরিশোধ করতে পারব কিনা, সেটাও জানতাম না। বিপুল পরিমাণ আর্থিক সম্পদ এমনভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছিল যেন সেগুলো কারো সম্পত্তিই ছিল না – কেবল নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকগুলো ঋণ দিত, ভালোভাবেই জানত যে এগুলো আসলে ঋণ নয়, কেবল উপহার (যা ফেরত দেওয়া হয়নি)।’
অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত একাধিক সংস্কার কমিশন জানুয়ারিতে নির্বাচন, দুর্নীতি এবং জনকল্যাণ সম্পর্কিত সুপারিশ পেশ করে। ইউনূস এখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই সংস্কারগুলো নিয়ে একটি ঐক্যমত তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছেন। তিনি চান যে ‘জুলাই সনদ’ আগামী মাসে অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর আগেই চূড়ান্ত করা হোক, যাতে তারা এপ্রিলের নির্বাচনের আগে সেগুলোর বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিতে পারে।
এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হবে, যা সকল মানুষকে একত্রিত করবে। কমিশনগুলোর সুপারিশগুলো মৌলিক সুপারিশ, হালকা কিছু নয়, শুধু একটু ভালো করা, বা এটা-ওটা করা নয় – একদমই না,’ তিনি বলেন। ‘তারপর আমাদের কাজ হলো এগুলো বাস্তবায়ন করা এবং দেশকে একটি সুস্থ, কার্যক্ষম ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা।’
এরপর আমরা খুশি হতে পারব যে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করার মতো একটি পরিস্থিতিতে আছি।’
তবে ইউনূস স্বীকার করেছেন যে, এই চুক্তি সহজ হবে না।
বিএনপি, যা এখন দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল এবং নির্বাচনে জয়ের স্পষ্ট দাবিদার, তারা দ্রুত নির্বাচনের তারিখের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রস্তাবিত দুই মেয়াদের সীমাবদ্ধতার বিরোধিতা করেছে।
তবে ইউনূস বলেছেন যে, বিরোধী রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐকমত্যের পূর্ব নজির খুব কম থাকা সত্ত্বেও, দলগুলো যেভাবে এখন পর্যন্ত একে অপরের সাথে কাজ করেছে তাতে তিনি উৎসাহিত।
ইউনূস রাষ্ট্রের কার্যকারিতা এবং জনগণকে সেবা প্রদানের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে চান। উদাহরণস্বরূপ, তিনি স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়ে অলাভজনক সামাজিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে চান এবং তার উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রসার ঘটাতে চান।