একসঙ্গে দুই ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাগলপ্রায় বাবা-মা। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে মহুবন্দ এলাকার পরিবেশ। কান্না, বিলাপ আর আহাজারিতে যেন থমকে গেছে চারপাশ। আশপাশের মানুষ সান্ত্বনা দিতে এসে থেমে যাচ্ছেন। তারাও নীরবে চোখ মুছছেন।
গত শনিবার (০৭ জুন) ঈদের দিন বিকালে কোরবানির মাংস শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দিতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন সৌদি প্রবাসী সাহেদ হোসেন সুমন (২৬)। এ সময় তার ছোটভাই রুমন আহমদ (২০) গুরুতর আহত হন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রুমনের।
এরপর থেকে বাবা-মা আর স্বজনদের কান্না থামছেই না।
নিহত দুই ভাই মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার মহুবন্দ গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে। সুমন সম্প্রতি সৌদি থেকে দেশে ফিরে বিয়ে করেছিলেন।
রবিবার বিকালে মহুবন্দ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুমন ও রুমনকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা।
একসঙ্গে দুই ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। তাদের বাবা বিলাপ করে কাঁদছিলেন। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা। স্বামীকে হারিয়ে সুমনের স্ত্রীও বাকরুদ্ধ। তাদের সান্ত্বনা দিতে এসে নিজেরাই চোখের জল ফেলছেন প্রতিবেশীরা।
রবিবার (৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টায় ইয়াকুবনগর ঈদগাহ মাঠে দুই ভাইয়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে শেষ ঠিকানা হয় দুই ভাইয়ের।
জানা গেছে, ঈদের দিন বিকালে কোরবানির মাংস শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দিতে ছোট ভাই রুমনকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দক্ষিণভাগে রওয়ানা দেন সাহেদ।
পথে বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক সড়কের কাঠালতলী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাহেদ। গুরুতর আহত হন রুমন। স্থানীয়রা রুমনকে উদ্ধার করে প্রথমে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত্যু হয় রুমনের।
বড়লেখা থানার এসআই নিউটন দত্ত জানিয়েছেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকার চালক পালিয়ে গেলেও গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।