শিরোনাম
দেশে করোনায় আরও দুজনের মৃত্যু! আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তাড়িয়েছি, চাঁদাবাজও তাড়াব : ফয়জুল করীম সম্ভাব্য তিন উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেছেন খামেনি রংপুর শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিখোঁজ দুই কিশোরীকে উদ্ধারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম প্রয়োজনে বিএনপি তিন হাজার আসনেও প্রার্থী দিতে পারবে: হেলেন জেরিন খান বিগত ৩ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কাজ করছে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে থাকব: ফখরুল বিএনপি নেতার গুদাম থেকে ১৩৫১৫ কেজি চাল উদ্ধার করল সেনাবাহিনী একদিনে সর্বোচ্চ ৩৫২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, একজনের মৃত্যু ড্র দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফর শুরু করেছে বাংলাদেশ
শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ১০:০২ অপরাহ্ন

জিলহজ্জের প্রথম দশ দিন চুল-নখ না কাটার তাৎপর্য

মো:ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ / ৪৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

কোরবানির প্রস্তুতির সময় শরিয়াহর কিছু নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি, যাতে এই ইবাদতের পূর্ণতা ও তাৎপর্য বজায় থাকে। তার মধ্যে একটি হলো, যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে চান, তাঁর জন্য জিলহজের প্রথম ১০ দিনে চুল-নখ না কাটা। এ সময় চুল, নখ বা ত্বকের কোনো অংশ কাটা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব (উত্তম)।

 

চুল-নখ কাটার বিধান কী?:

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ ইবনে বাজ বলেছেন, ‘যদি কেউ কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে এবং জিলহজ মাস শুরু হয়—হয় নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে, অথবা জিলকদ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর—তবে তার জন্য কোরবানি জবাই না করা পর্যন্ত চুল, নখ বা ত্বকের কোনো অংশ কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।’

এই নির্দেশনার ভিত্তি হলো হজরত উম্মে সালামার (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজের নতুন চাঁদ দেখবে—অথবা ১০ দিন শুরু হবে—এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭; মুসনাদে আহমাদ; হাদিস: ২৬,৬৬১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজের নতুন চাঁদ দেখবে—অথবা ১০ দিন শুরু হবে—এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’

(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭; মুসনাদে আহমাদ; হাদিস: ২৬,৬৬১)

মুসনাদে আহমাদের অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তার চুল বা ত্বকের কিছুই স্পর্শ করা উচিত নয়।’

যে ব্যক্তি কোরবানি করবে না, তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না—এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, কোরবানি যারা করবে না, তাদের জন্যও এ আমল রয়েছে। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.)-এর বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে কোরবানির দিবসে ঈদ পালনের আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ এক সাহাবি বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, যদি আমার কাছে শুধু এমন একটি পশু থাকে যা দুধ পানের জন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে, আমি কি তা কোরবানি করব?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘না, তবে (দশ দিন পরে) তুমি চুল, নখ ও গোঁফ কাটবে এবং অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৭৮৯; সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৪,৩৬৫)

 

এই নিষেধের কারণ:

এই নিষেধের পেছনে একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। যে ব্যক্তি কোরবানি দেয়, সে হজের কিছু আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়, যেমন কোরবানি করা হজের অংশ। এই সময়ে চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকা ইহরামের কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা হজ পালনকারীরা মেনে থাকেন। এটি কোরবানিকারীর ইবাদতের প্রতি নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ।

এই নিষেধ শুধু সেই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যিনি নিজে কোরবানি জবাই করবেন। যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হচ্ছে, যেমন পরিবারের সদস্য বা অন্য কেউ, তাদের ওপর এই নিষেধ প্রযোজ্য নয়। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি দিতে চায়…’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭)। এখানে ‘যে কোরবানি দিতে চায়’ বলতে জবাইকারী ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যার পক্ষে কোরবানি দেওয়া হচ্ছে তাদের নয়। রাসুল (সা.) নিজে তাঁর পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে কোরবানি দিতেন, কিন্তু তাদের চুল বা নখ কাটা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই কোরবানিকারীর পরিবারের সদস্যরা জিলহজের প্রথম দশ দিনে চুল, নখ বা ত্বক কাটতে পারেন।

সুন্নাহ পালন করতে চাইলে জিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে জিলহজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত, যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়।

তবে এই বিধান তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়। কেননা, হাদিসে আছে, আনাস (রা.) বলেন, গোঁফ কর্তন করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার বিষয়ে আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যে আমরা যেন ৪০ দিনের বেশি বিলম্ব না করি। (সহিহ মুসলিম ১/১২৯; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলালমারাকি ২৮৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪৯৬)

 

কেউ চুল বা নখ কেটে ফেললে:

যদি কোরবানি দেওয়ার নিয়তকারী ব্যক্তি জিলহজের প্রথম ১০ দিনে চুল, নখ বা ত্বকের কোনো অংশ কেটে ফেলেন, তবে তাকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। শায়খ ইবনে বাজ বলেছেন, এই ক্ষেত্রে কোনো কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও চুল বা নখ কাটা কোরবানির বৈধতার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। কিছু মানুষের ভুল ধারণা থাকলেও এটি কোরবানিকে অগ্রহণযোগ্য করে না।

তবে এই বিধান তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়।

তবে যদি কেউ ভুলে বা শরিয়াহর নিয়ম না জেনে চুল বা নখ কাটেন, তবে তার ওপর কোনো গুনাহ হবে না। যদি চুল বা নখ অনিচ্ছাকৃতভাবে পড়ে যায়, তবে এতে কোনো দোষ নেই। যদি কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, যেমন নখ ভেঙে গিয়ে ব্যথা বা অসুবিধা সৃষ্টি করছে, চোখে চুল পড়ে সমস্যা হচ্ছে, অথবা ক্ষতের চিকিৎসার জন্য চুল কাটা প্রয়োজন, তবে তা কাটা জায়েজ। এই ক্ষেত্রে কোনো গুনাহ হবে না।

সুন্নাহ পালন করতে চাইলে জিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে জিলহজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়, যা সুন্নাত পরিপন্থী। আর যদি কেউ জিলহজের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে কোনো দিন কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে, তবে নিয়ত করার মুহূর্ত থেকে তার চুল, নখ বা ত্বক কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত। এই ঈদে আমরা যেন শরিয়াহর নির্দেশনা মেনে কোরবানি সম্পন্ন করি এবং ত্যাগের এই মহান ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ