ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সোমবার বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি খাতের কর্মীদের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা একটি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই সময় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে দেশে সংস্কারের চেষ্টা করছে ইউনূস প্রশাসন। কিন্তু ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই প্রশাসন সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল এবং সেনাবাহিনীর চাপের মুখে রয়েছে।
গত রবিবার সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে, যার মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই সরকারি কর্মচারীদের অসদাচরণের অভিযোগে বরখাস্ত করতে পারবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো সরকারি কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘দমনমূলক’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান এবং এর অবিলম্বে প্রত্যাহার দাবি করেন। এদিন হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যান, তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মীদের আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার রবিবার রাজস্ব সংস্থা ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ স্থাপনের আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এর পরেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
গত সপ্তাহে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরো বেড়ে যায় যখন একজন শীর্ষ ছাত্রনেতা জানান, সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারলে পদত্যাগ করতে পারেন মুহাম্মদ ইউনূস।
তবে ইউনূস সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ও মন্ত্রিসভার সদস্য ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস পদত্যাগ করছেন না। মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাচ্ছি না।’ তিনি আরো যোগ করেন, মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিবন্ধকতাগুলো স্বীকার করেছেন, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার একদিকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন এবং অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কারের চাহিদার মাঝে আটকে পড়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে হতে পারে। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও এই রাজনৈতিক চাপকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত সপ্তাহে দেওয়া এক ভাষণে তিনি ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাবস্থার মতো পরিস্থিতিতে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর বিভিন্নভাবে আমাদের অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ এই মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে, যার ফলে দলটি পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে।