ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আলোকে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ছয়টি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্য নিয়ে গত জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই শুরু হয়, যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এখন ব্যাংকগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই ছয়টি ব্যাংক হলো– সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক মিলে একটি এবং এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক মিলে আরেকটি ব্যাংক করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির কারণে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ছয়টি বেসরকারি ব্যাংককে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একীভূত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো একীভূত করে সাময়িক সময়ের জন্য সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, ছয়টি ব্যাংককে জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের মালিকানায় এনে প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়ে রেখেছে। তবে সরকারের হাতে ব্যাংকগুলো সাময়িক সময়ের জন্য থাকবে। এরপর পর্যাপ্ত মূলধন জোগান দিয়ে ব্যাংকগুলোর ভিত্তি শক্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে– এ রকম ১৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন কোনোমতে টিকে থাকা ব্যাংকগুলোকে আর সামনে না টেনে একটি সমাধানে আনতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যেই ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হবে।
দেশে বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে ১০টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব ইসলামী ব্যাংক মিলে দুটি করা হবে, এমন নয়। গত জানুয়ারিতে যে ছয়টি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) বা সম্পদের গুণগত মান যাচাই শুরু হয়, সেগুলো নিয়েই দুটি ব্যাংক করার আলোচনা রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে খুব দুর্বল গ্লোবাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এক করে দেওয়া হতে পারে।
এই তিনটি ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নের কাজ দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াংকে। অপর তিন ব্যাংকের মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে খুবই দুর্বল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করার আলোচনা রয়েছে। এই তিনটি ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়ন করছে আরেক বৈশ্বিক অডিটর কেপিএমজি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, সম্পদ যাচাই প্রক্রিয়ায় থাকা ছয় ব্যাংক নিষ্পত্তির শেষ ধাপে আছে। ব্যাংকগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সুপারিশ করা হবে। সেই সুপারিশের আলোকে ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলে আলোচনা করে এরপর সিদ্ধান্ত।