ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রংপুর বিভাগে। বিভাগটিতে গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার (১৯ মে) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বিভাগটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রংপুর জেলায় ১০৪ মিলিমিটার। তা ছাড়া উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি। এদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে ১৭৫ মিলিমিটার।
রংপুর অফিস জানায়, রংপুর বিভাগে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এতে করে খাল-বিল, নদী-নালা-পুকুর পানিতে পরিপূর্ণ হয়েছে। উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রংপুরের আবহাওয়া কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুর বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। রংপুর বিভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত এ ধরনের আবহাওয়া বিরাজমান থাকতে পারে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার এক মিটার এবং ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, আগামী দুদিন রংপুর বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বর্তমানে তা বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
বগুড়ায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড বগুড়া অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বগুড়া আবহাওয়া অফিস। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত একটানা মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টিতে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেন উপচে পড়ায় সাতমাথা, বড়গোলা, চকসুত্রাপুরসহ প্রধান সড়কগুলোতে হাঁটুপানি জমে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেন, অফিসে যাওয়ার সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সড়কে পানি জমে যায়। ছাতা নিয়ে চলা খুবই কষ্টকর ছিল।
স্কুলশিক্ষক মাহাবুব হাসান সোহাগ বলেন, বৃষ্টির কারণে কয়েক দিনের তীব্র গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। তবে রাস্তায় পানি জমে থাকায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। রিকশাচালক ওয়ালিউল্লাহ বলেন, বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে। তখন রিকশা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। রাস্তার গর্তগুলোতে পানি জমে গিয়ে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জ শহরের সিংহভাগ পানির নিচে মধ্যাঞ্চলীয় অফিস জানায়, কিশোরগঞ্জে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মাত্র দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের ৭০ ভাগ এলাকার সকল সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি ঢুকে থইথই করছে। এতে শহরবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানি কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়ক, জেলা প্রশাসকের অফিস, পুলিশ সুপারের অফিস, যশোদল বিদ্যুৎকেন্দ্র, সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি অফিস-আদালতসহ বাসাবাড়ি, দোকানপাটে ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার প্রধান নির্বাহী হাসান জাকির বলেন, এত দীর্ঘ সময় ভারী বৃষ্টি হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌরসভার টিম কাজ করছে। তবে পানির ভয়াবহ স্রোতধারা কমাতে একটু সময় লাগবে। তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহতভাবে চলছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।