শিরোনাম
ইসরায়েলের ২৮টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি ইরানের ইসরায়েলি ভূখণ্ডে জোড়ালো হামলা; আবারও ৮ দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরান লালমনিরহাটের পাটগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে নিহত-১ ‘জামায়াত আগে ছিল হেলমেট বাহিনী, এখন তারাই টুপি লাগিয়ে হামলা করে’ ইরানের আকাশ এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের, প্রাণে বেঁচেছেন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে দুজনের মৃত্যু; শনাক্ত ১৮ নিজের নামে স্মার্টফোন আনছেন ট্রাম্প রংপুরে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু, প্রস্তুত আইসোলেশন ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘন্টায় আরো ২৪৪ জন আক্রান্ত
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

দেড় মাসে ৪০ জনের মৃত্যু, এত বজ্রাঘাতের কারণ কী!!

মো:ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ / ৪৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

চলতি বছর এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত দেশে বজ্রাঘাতে সারাদেশে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। বজ্রাঘাতে গাছ ফেটে চৌচির, তালগাছে অগ্নিকাণ্ড, তুলার গোডাউন পুড়ে ছাই, কৃষকের গাভীর মৃত্যুসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর বজ্রাঘাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- সীমান্তে টহলের সময় বিজিবির সদস্য, কৃষক, শিক্ষার্থী, জেলেসহ অন্যান্য পেশাজীবী মানুষ। দেশে বজ্রাঘাতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই মাঠে কাজ করেন।

দেশে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রাঘাতের প্রকোপ থাকে বেশি। বজ্রাঘাতে বছরে গড়ে প্রাণ হারান ৩০০ জন এবং সবচেয়ে বেশি বজ্রাঘাত প্রবণ জেলা সুনামগঞ্জ, শেরপুর ও সিরাজগঞ্জ। বজ্রাঘাতের মাত্রা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে সরকার জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় ২০১৬ সালের ১৭ মে বজ্রপাতকে অন্তর্ভুক্ত করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস নামে এক ধরণের বিশেষ মেঘের মধ্যকার অপেক্ষাকৃত ছোট জলের কণা এবং অপেক্ষাকৃত বড় জলের কণার সংঘর্ষের ফলে বজ্রপাত সংঘটিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোয় বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এর মূল কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয় আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এরকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এরকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।

কোন কোন গবেষক বলেন তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। পৃথিবীর যে কয়েকটি অঞ্চল বজ্রপাত প্রবণ তার মধ্যে দক্ষিণ-এশিয়া অন্যতম।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, দেশে বজ্রাঘাতের ঘটনা নতুন কিছু না। তিনটি জেলায় বজ্রাঘাত বেশি হয় এগুলো হলো- সুনামগঞ্জ, শেরপুর ও সিরাজগঞ্জ। বর্তমানের গণমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসায় এসব খবর বেশি হচ্ছে। বজ্রাঘাতের ঘটনাগুলো মুহূর্তের মধ্যে আমাদের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে যা আগে এতোটা সহজ ছিল না। আরেকটা বিষয় হলো অতীতের বজ্রাঘাতের ঘটানগুলো কাউন্টিং ছিল না। আমাদের সেরকম প্রযুক্তিও ছিল না। এখন যেহেতু আমাদের হাতে প্রযুক্তি আছে, তাতে বজ্রাঘাতের ঘটনাগুলো দেখতে পাচ্ছি। বজ্রাঘাত বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা যত বাড়বে, বজ্রাঘাতের সংখ্যা আর প্রাণহানির ঝুঁকিও তত বাড়বে। এই বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বব্যাপী গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটা পার্ট আমাদের দেশে আছে। ১৯৬১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি দশকধরে যদি আমরা তুলনা করি তা হলে দেখা যাবে সর্বশেষ যে দশক ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্য দশকের থেকে একটু হলেও বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও বজ্রাঘাতের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বজ্রাঘাত থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রযুক্তিই হাতে নেয়া হোক না কেন, যেটা সব থেকে বেশি কার্যকর হতে পারে তা হেলো- জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এর কোনো বিকল্প নেই। এপ্রিল-মে মাসের বৃষ্টিগুলো অধিকাংশই কালবৈশাখীর জন্য সৃষ্টি হয়। এ সময় বৃষ্টি পশ্চিম দিক থেকে শুরু হয়ে পূর্বদিকে চলে যায়। এই বৃষ্টি ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট বা সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়। এই সময়টুকু মাঠে-ঘাটে যেখানেই থাকুক না কেনো আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় নিরাপদস্থানে থাকা। উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বজ্রাঘাতের সময় নিরাপদ থাকার জন্য কিছু নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। তা হলো- বজ্রাঘাতের সময় ঘরের ভেতরে থাকা সব থেকে নিরাপদ, জানালা ও দরজা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। যাতে বজ্রপাতের তীব্র শব্দ ও বৈদ্যুতিক প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে সতর্ক থাকা, উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয় এড়িয়ে চলা, ধাতব বস্তু ও কংক্রিট এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ