অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শুরু থেকেই বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। ইতোমধ্যে ব্যতিক্রমী কিছু কাজ করে সাধারণ মানুষের বাহবাও কুড়িয়েছেন। এবার দেশে বিদেশে সাক্ষাতে আসা লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া দামি উপহার পেয়ে তা সরকারের তোষাখানায় জমা দিয়ে, কখনো ফিরিয়ে দিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন আমলা থেকে উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া ফাওজুল কবির।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) নিজেে ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছেন উপদেষ্টা নিজেই।
ফেসবুক পোস্টে উপহার পাওয়ার বিষয়ে দুটো ঘটনা তুলে ধরেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির। সম্প্রতি গাজীপুরে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে নাম ফলকে নিজের নাম দেখে চটে যাওয়ার পর এবার দামি উপহার ফেরত দেওয়ার খবরকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। অনেকে তার এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
পোস্টে উপদেষ্টা লিখেছেন, কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কায় এক মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে গেলে সেখানকার বিদ্যুৎমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমাকে একটি উপহার প্রদান করা হয়। হোটেলে ফিরে গিফট বক্স খুলে দেখি একটি দামি ব্র্যান্ডের হাতঘড়ি। ঘড়িটি আমি হাতে পড়ি, পছন্দ হয়, লোভ হয়। দেশে ফিরে এসে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি লিখে ঘড়িটি তোষাখানায় জমা দেওয়ার জন্য পাঠাই।
পরের ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে ফাওজুল কবির লিখেছেন, গত পরশু আবার এক ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রধান (আদানি নয়) আমার সঙ্গে দেখা করেন, আমাদের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে। দীর্ঘদিনের পাওনা বকেয়া পরিষদ করায় কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছেন। ফেরার সময় বলেন সামান্য উপহার নিয়ে এসেছি। আমি তাকে বলি উপহার গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত মূল্যসীমা আছে। উপহারটি খুলে দেখি একটি আইপ্যাড। বাসার আইপ্যাডটি পুরনো হয়ে গেছে, তাই লোভ হয়। আইপ্যাডটি তাকে ফিরিয়ে দিই। পাশে সোফায় বসে আমার কাণ্ড দেখে অন্য একজন উপদেষ্টা মিটি মিটি হাসছেন।
কোন ধরনের উপহার সাধারণত গ্রহণ করেন তা তুলে ধরে উপদেষ্টা লিখেছেন, কোনো উপহারই গ্রহণ করি না; এমন নয়। বিদেশি মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূতরা দেখা করার সময় স্যুভেনির, বই নিয়ে আসেন। অবাণিজ্যিক পণ্য বা মূল্যসীমার মধ্যে কোনো খাবার যেমন: চকোলেট; এগুলো গ্রহণ করি। বিনিময়ে তাদের নিজের লেখা বই উপহার দিই। ভাগ্যিস কয়েকটা বই লিখেছিলাম!
নিজের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা লিখেছেন, আমার মনে হয়েছে প্রলোভনের ঊর্ধ্বে ওঠাই জনপ্রতিনিধিদের প্রধান কাজ। এটা করতে পারলেই অন্য সব কাজ সহজ হয়ে যায়। আশা করি আসন্ন নির্বাচনে জনগণ নির্লোভ জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবেন।