বরিশালের উজিরপুরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) জমিতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে দলীয় কার্যালয় করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেটি ছিল টিনের। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পুড়িয়ে দেওয়া হয় উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি। সেই জায়গা দখল করে ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে ছাদ দিয়ে পাকা ভবন নির্মিত হলেও বিষয়টি জানেনই না বলে দাবি করেছেন সওজ কর্মকর্তারা।
বরিশাল-বানারীপাড়ার সড়কে গুঠিয়া সেতু এলাকাটি সবচেয়ে ব্যস্ত। আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়কেন্দ্রও। বরিশাল থেকে বানারীপাড়া যেতে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে ঢালের শুরুতেই দক্ষিণ পাশে পাকা ভবনটি দেখা গেছে। ঢাল যেখানে শুরু হয়েছে সেখান থেকে আনুমানিক ৫ ফুট দূরেই এই ভবনের অবস্থান। সরেজমিন দেখা গেছে, খালঘেঁষে পিলারের ওপর নির্মিত ভবনের চারদিকের দেয়াল ও ছাদ ঢালাই শেষ। ভবনে ঢোকার ফটক দেওয়া হয়েছে পশ্চিম দিকে। এদিক দিয়ে মূল সড়ক থেকে গুঠিয়া হাটে যাওয়ার শাখা সড়ক। দুটি সাটারের সমান প্রবেশমুখটি।
সওজ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় গুঠিয়া সেতুটি নির্মিত হয়। এ জন্য দশমিক ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সেখানে কার্যালয় করার বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদধারী এক নেতা দাবি করেন, তারা সওজ বিভাগ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে টিনের ঘর তুলে কার্যালয় করেছিলেন। সরকার পতনের দিন সেখানে লুটপাটের পর আগুন দিয়েছে। এখন সেখানেই পাকা ভবন করছে বিএনপি।
বিষয়টি স্বীকার করেন গুঠিয়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ও উজিরপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন হাওলাদার। তিনি সমকালকে বলেন, ‘খালি জমি পড়ে আছে ভবন করেছি। সরকারের যদি কোনো দিন প্রয়োজন হয় ছেড়ে দেব।’
এই নেতার দাবি, সেখানে আগে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল না। যদিও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল সেখানে। সেতুর ঢাল ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এ ছাড়া সরকারি জমিতে পাকা ভবন করা ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বিএনপি নেতা শাহিন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় সরকারি জমিতে অনেক দলের অফিস হয়েছে, তাতে হয়েছে কী?’
এ বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেন সওজ বিভাগের বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘আমাকে এ বিষয়ে কেউ অবহিত করেননি। ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে খোঁজ নিচ্ছি।’
বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সওজ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী হামিদুর রহমান এদিন বেলা ৩টার দিকে বলেন, খবর পেয়ে ভবনটি দেখে এসেছেন। উঁচু ভবনে ওঠার জন্য সিঁড়ির কাজও শেষ হয়েছে। ভবনটি সওজের জমিতে পড়েছে কিনা, সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে দেখতে হবে।