গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একই দিনে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সদস্য নবায়ন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কর্মসূচির কারণে পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করেননি।
জেলা বিএনপির প্যাডে কমিটি গঠনের যে শিডিউল দেওয়া হয়েছে, এতে বুধবারের কর্মসূচির তালিকায় সোনারায় ইউনিয়নের শিবরাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের ধুবনী কঞ্চিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, চণ্ডীপুর ইউনিয়নের হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও চণ্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সর্বানন্দ ইউনিয়নের রামভদ্র স্কুল (কেজি), ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের বজরা হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং শান্তিরাম ইউনিয়নের খুদিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে।
২৫ আগস্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই করা দলীয় প্যাডে সুন্দরগঞ্জের ১৫ ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব কার্যক্রম পরিচালনার শিডিউল প্রকাশিত হয়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি কর্মসূচির সময় রাখা হয়েছে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
এই শিডিউল অনুযায়ী মঙ্গলবার দিনভর উপজেলার তিন ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই ধরনের কর্মসূচি চলে। বৃহস্পতিবার পাঁচ ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কর্মসূচি চলার কথা।
বিদ্যালয়ে এমন কর্মসূচিতে অভিভাবকদের পাশাপাশি বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানিয়েছেন, শত শত নেতাকর্মী বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ায় পাঠদান সম্ভব হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে না পেরে ফিরে গেছে। এ ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে উল্লেখ করে এক বিএনপিকর্মী বলেন, জেলা নেতাদের কারণেই এভাবে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
যদিও কর্মসূচির কারণে পাঠদান বন্ধের বিষয়টি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অস্বীকার করেন। শিবরাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছা. ফরিদা পারভীন চৌধুরীর ভাষ্য, কলেজের একটি ভবনের হলরুমে বিএনপির নেতাকর্মীরা কমিটি গঠনের কার্যক্রম করেছেন। আগেই এ জন্য তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। এতে পাঠদানে কোনো সমস্যা হয়নি।
উপজেলার বজরা হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব আলী দাবি করেন, বিএনপির কমিটি গঠনের জন্য পাঠদান বন্ধ ছিল না। শিক্ষার্থীরা মওলানা ভাসানী সেতু দেখার জন্য গিয়েছিল। সে কারণে পাঠদান বন্ধ ছিল। এরই ফাঁকে বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি কক্ষে কমিটি গঠন করেছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চলাকালে কাউকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বলা হয়নি বলে দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যালয় ছুটির পর বা বন্ধের দিনে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি নিয়ে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ীই কর্মসূচি হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদের ভাষ্য, তিনিও একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান। কোনো বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ করে কমিটি গঠন বা অন্য কার্যক্রম হয়নি। একটি মহল তাদের হেয় প্রতিপন্ন করতেই এমন অভিযোগ ছড়িয়েছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নিয়ম নেই উল্লেখ করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। শিক্ষকদের মাসিক সভায়ও এ নিয়ে আলোচনা করবেন। এমন কোনো বিষয় জানা ছিল না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজকুমার বিশ্বাসের। তিনি খোঁজ নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের চিঠি দেবেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।