নিজের নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রবল ইচ্ছা থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হননি বেগম রোকেয়া। শেষ পর্যন্ত তিনি ভর্তি হয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়া এই তরুণীর পুরো নামই বেগম রোকেয়া। বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নে। বাবা রফিকুল ইসলাম একজন নির্মাণ শ্রমিক, মা কোহিনুর বেগম গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে রোকেয়া সবার বড়। ছোট বোন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট ভাইয়ের বয়স মাত্র ৫ বছর। এসএসসিতে বেগম রোকেয়া পেয়েছেন ৪.৫৬, এইচএসসিতে ৪.৩৩।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইভার জন্য ডাক পান রোকেয়া, হয়তো ভাইবাতে অংশগ্রহণ করে ভর্তি হতে পারতেন, কিন্তু যাননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটে তার সিরিয়াল ছিল ১ হাজার ৩৫৮। ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকলেও শুধু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছেতেই সে সুযোগ গ্রহণ করেননি।
পরের বছর আরও কঠোর প্রস্তুতি নিয়ে ফের পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০২৪-২৫ সেশনে শাবিপ্রবিতে ওয়েটিং লিস্টে আসেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্ট পান, তবুও ভর্তি হননি। অবিচল ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে—নিজের নামের বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হবেন।
প্রথমবার চবিতে না গিয়ে হতাশ হননি?’ এমন প্রশ্ন করলে রোকেয়া বলেন, ‘প্রথমবার আমার বাবা অনেক টাকা খরচ করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ করেছিলেন। এরপর ঢাকায় মামার বাসায় গিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। সেই সময় থেকে আর ভালো করে ঘুমাতে পারিনি। মাথায় ছিল একটাই চিন্তা—বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেই হবে। যখন ভর্তি হলাম, তখনই শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছিলাম।’
এ নিয়ে রোকেয়ার বন্ধু সামিয়েল সামি বলেন, অনেকে হয়তো ভাববে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আবার ভর্তি হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু রোকেয়া তার নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চেয়েছে, যা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
এ প্রসঙ্গে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, নিজের নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য এতোগুলো ভালো সুযোগ ছেড়ে দেওয়া অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত। রোকেয়া তার এ সাহস ধরে রেখে ভবিষ্যতে যেন একজন সত্যিকারের রোকেয়া হয়ে উঠে।