একটি শোক সংবাদ…’ শোনামাত্রই সজাগ হয়ে উঠে সবার কান। মুখে আসে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন৷ সকলের মনের ভাবনা,আবার কে মারা গেল! কার প্রিয়জন বিদায় নিলো এ ধরণি থেকে? মানুষের মহাপ্রস্থানের হৃদয়গ্রাহী খবরটি মাইকে প্রচার করে সবার কাছে পৌঁছে দেন ওমর ফারুক। যিনি এই কাজ করে চলেছেন প্রায় ১৩ বছর ধরে। কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পূর্ব চান্দঘাট গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে মো. ওমর আলী (২৭)। এলাকার সবাই তাকে চেনেন মরার মাইকিং করা ওমর আলী নামেই। জীবিকা নির্বাহের জন্য অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি মাইকে মৃত্যুর সংবাদও প্রচার করেন। তার দরাজ গলার শোক সংবাদ শোনার জন্য কেউই হয়তো প্রস্তুত থাকেন না। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে কোনো কোনো দিন তাকে ২-৩টি মৃত্যুর সংবাদ মাইকে প্রচার করতে হয়। উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের ভুতছাড়া গ্রামে মাইকিং করার সময় অটো নিয়ে দাঁড়িয়ে মাইকিং করা অবস্থায় কথা হয় ওমর আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে ২০১০ সাল থেকে অন্যের রিকশায় ফ্রি মাইকিং করতেন। সে সময় থেকেই মৃত্যুর মাইকিংও করে আসছেন তিনি। কিছুদিন পর তিনি নিজের অটো ও নিজের মাইক সেট ব্যবহার করে কোনো কোনো দিন ২-৩টির বেশি মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করতে হয় তাকে। মাসে ১৫-২০টি করে মাইকিং করেন তিনি। মাসে গড়ে ১৭টি হিসাবে ১৩ বছরে প্রায় তিন হাজারের বেশি মৃত ব্যক্তির মাইকিং করেছেন বলে জানান ওমর ওমর আলী।
মৃত্যুসংবাদ প্রচার করে কোনো ভাড়া নেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর আলী বলেন, আমি টাকা নেই না এটি একটি মানবিক কাজ। তবে অটোরিকশা ভাড়া বাবদ ‘কখনো নির্দিষ্ট ভাড়া ঠিক করি না। যে যার ইচ্ছেমতো সামর্থ্য অনুযায়ী।খুশি করে যত ইচ্ছা তত টাকা দিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ পার করেও টাকা দেন।’ স্থানীয় বাজারের সব মাইকের দোকানে তার মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। কোনো মৃত্যুর সংবাদ এলেই রিকশায় মাইক বেঁধে নেমে পড়েন ‘একটি শোক সংবাদ…’ বলার কাজে। তবে সবসময় মানুষের কানে শোক সংবাদ পৌঁছাতে হয় না। গরমের শেষ ও শীতের শেষে মৃত্যুর সংবাদ বেশি হয় বলে তিনি জানান।
রিকশাচালক আসাদুল, দয়ালসহ আরও কয়েকজন জানান, ‘আমরা একসঙ্গেই অটোরিকশা চালাই। আমাদের আত্মীয়স্বজনদের মৃত্যুতে ওমর আলী মাইকিং করেন। কখনো টাকা নিয়ে তার তেমন কোনো চাহিদা নেই।’ সাব্দী দারুস সুন্নাহ আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মো. এমদাদুল হক বলে, ‘আমার গ্রামের কেউ মারা গেলে মাইকিং করার জন্য ওমর আলীকে খবর দিই। দ্রুত তিনি হাজির হয়ে অসুস্থ শরীরেই রাতের ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে মাইকিং করেন। তবে তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন যতদিন তার শরীর সুস্থ থাকবে তিনি ততদিন এই মানবিক কাজটি করে যাবেন।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কারও মৃত্যু ঘটলেই সবার আগে খবর ছড়িয়ে দেন ওমর আলী হাতে মাইক নিয়ে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি ছুটে বেড়ানোই যেন তার নেশা। কার মৃত্যু হলো, বয়স কত, কখন জানাজা হবে—সব তথ্য মুহূর্তেই মাইকযোগে প্রচার করে এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি মাইক ওমর আলী।