শিরোনাম
জামায়াত সরকার গঠন করলে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা হবে না দ্রুত সময়ের মধ্যে রংপুরে বিভাগীয় স্টেডিয়াম স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করবো: আসিফ মাহমুদ কিশোরগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত  কাউনিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন ৭২ শিক্ষার্থী ৬ শিক্ষক–কর্মচারী: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন: নীলফামারীর ঢাবিয়ান শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নীলফামারীতে বিএনপি প্রার্থীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ এক দিনের রিমান্ডে হরিপুরে অর্থ আত্মসাধের অভিযোগ উঠেছে পি আই ও অফিস সহায়ক বিষ্ণুর বিরুদ্ধে  কালীগঞ্জে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গাজীপুরে গ্রেপ্তার ৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রকাশ্যে গুলি
বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

৭২ শিক্ষার্থী ৬ শিক্ষক–কর্মচারী: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি / ৫ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত ‘কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল’ এ মাত্র ৭২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঁচজন শিক্ষক ও একজন অফিস সহকারী কর্মরত রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে এ বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্লে গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সাতটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৭২। সেখানে কর্মরত রয়েছেন ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী অর্থাৎ প্রতি ১২ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক বা কর্মচারী। অথচ জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা অনুসারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষক সংকট প্রকট, সেখানে এই অনুপাতকে অস্বাভাবিক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

তদন্তে জানা যায়, বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষক ও কর্মচারীই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ত্রী। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. লোপা খাতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এস. এম. হাফিজুর রহমানের স্ত্রী। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে তৎকালীন উপাচার্য মোহিত উল আলমের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে নিয়ম উপেক্ষা করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এছাড়া শিক্ষক মোছা. সাবিনা ইয়াসমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার লিয়াকত হাসানের স্ত্রী, রোকসানা হাসান বৃষ্টি ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক সোহেল রানার স্ত্রী, রোকাইয়া আক্তার হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিনের স্ত্রী এবং মন্টি রানী সরকারের স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের উপপ্রধান প্রকৌশলী স্বপন কুমার শীল। অফিস সহকারী মঞ্জু আরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের কর্মী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার অভিযোগ, বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বা যোগ্যতা যাচাই হয়নি। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই স্ত্রীদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালার লঙ্ঘন এবং সরকারি অর্থের অপচয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শহীদুল ইসলাম বলেন, “এখন হাজার হাজার মেধাবী বেকার চাকরির অপেক্ষায়। সেখানে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে স্কুল পরিচালনার নামে কয়েকজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে চাকরি দেওয়া অনৈতিক এবং তদন্তসাপেক্ষ।”

তবে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. লোপা খাতুন বলেন, “আমি প্রায় বাধ্য হয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। আগের প্রধান শিক্ষক (বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক রুহুল আমিনের স্ত্রী) অনুপস্থিত থাকায় আমাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি এবং নতুন ভবনের জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “বর্তমানে বিদ্যালয়ে যারা শিক্ষক হিসেবে আছেন, তাদের কারও নিয়োগপত্র নেই। ইউজিসিতে প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে।”

ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, “আমাদের জেলায় গড়ে প্রতি ২২ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। কোথাও শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থী কম থাকলে শিক্ষককে বদলি দেওয়া হয়। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের বিষয়টি আমাদের জানা নেই, তবে খতিয়ে দেখা হবে।”

শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, দেশে যখন শিক্ষক সংকট তীব্র, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধু নীতিমালা লঙ্ঘনই নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতারও পরিপন্থী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ