ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ৪০ ঘণ্টা ধরে আমরণ অনশন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনশনের কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে দুইজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে একাধিকবার চেষ্টা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভিসি স্বয়ং সার্বক্ষণিকভাবে বিষয়টির খোঁজখবর রাখেন এবং উপস্থিত হয়ে কয়েকবার অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশ সংক্রান্ত কার্যক্রম দু’এক দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। যেহেতু এই কাজ চলমান রয়েছে, সেহেতু অনশন করে শিক্ষার্থীদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে না ফেলে ১০ কার্যদিবস সময় দিয়ে প্রক্রিয়াটিতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে ১০ কার্যদিবস সময় চাওয়া হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র সংসদ গঠন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে একটি কার্যকর ছাত্র সংসদই হতে পারে সেরা সমাধান। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করবেন এবং সমাধানে ভূমিকা রাখবেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে প্রশাসন কবে ছাত্র সংসদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে।
বর্তমান প্রশাসনও ছাত্র সংসদ গঠনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত। ছাত্রদের প্রতিনিধিরা যেন নির্বাচিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে—এটাই প্রশাসনের লক্ষ্য। তবে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯-এ ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত কোনো বিধান না থাকায় প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পরই ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ নেয়।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে—
১. ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ সংরক্ষণের জন্য একটি আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে এবং সেখানে জমাকৃত অর্থ রাখা হয়েছে। আগে এমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এই অর্থ শুধুমাত্র ছাত্র সংসদের কাজে ব্যবহার করা হবে।
২. ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ভিসি একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও তিনটি আবাসিক হলের জন্য পৃথকভাবে একটি গঠনতন্ত্র খসড়া তৈরি করেন। যা ১৪ মে ২০২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে পাঠানো হয়।
বর্তমানে গঠনতন্ত্রটি ইউজিসির মাধ্যমে ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখে গঠিত ৭ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেখান থেকে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির (বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর) কাছে পাঠানো হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গঠনতন্ত্রটি সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। এরপর এই গঠনতন্ত্রের আলোকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গঠনতন্ত্রটি সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। এরপর এই গঠনতন্ত্রের আলোকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি দ্রুততর করতে ইউজিসি কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছেন ভিসি। তাঁরা জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে কাজ করে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই খসড়া নীতিমালা যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শেষে ভিসি শিক্ষার্থীদের সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
একইসঙ্গে, অভিভাবকসুলভ মনোভাব থেকে ভিসি অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে খাবার গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।