শিরোনাম
বগুড়ায় ইউপি চেয়ারম্যান হয়রত আলী গ্রেফতার হঠাৎ করে পেঁয়াজ আমদানির আইপি বন্ধ, হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন চাল শুধু মানুষের জন্য নয়, পশু ও অন্যান্য খাদ্যেরও ব্যবহার: আলী ইমাম মজুমদার ‘এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’- আদালত চত্বরে পলক তোর বাবা টাকা দিতে পারে না, তোকে পরীক্ষা দিতে হবে না, বলে বের করে দেয় রংপুরের পীরগাছায় ঘাঘট নদে ডুবে যাওয়ার ১৩ ঘণ্টা পর ভেসে উঠল শিশুর লাশ ঠাকুরগাঁওয়ে জাতীয় দলের নারী ফুটবলার সাগরিকার বাড়িতে চুরি বাচ্চা হওয়ায় মাফ করেছি কিন্তু পাগল হলে মাফ নাই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ হটাৎ অসুস্থ হওয়া মির্জা ফখরুলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল
বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:২১ অপরাহ্ন

তারাগঞ্জে জামাই-শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যা; নিহত প্রদীপের ঘরে অন্ধকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর / ৪০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

এক সময় জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন প্রদীপ লাল দাস। বছর পাঁচেক আগে ডান পায়ে ঘা ও ইনফেকশন দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গোড়ালি থেকে কেটে ফেলতে হয়। এ কারণে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতে পারতেন না প্রদীপ। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলে। পরে অন্যদের সহযোগিতায় অটোভ্যান কেনেন। সেই ভ্যান চালিয়ে স্বল্প আয়ে কোনো রকমে সংসার চলত। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, সন্তানরা পড়াশোনা শেষ করে তাঁর কষ্ট ঘোচাবে। কিন্তু তার আগেই পরিবারে অন্ধকার নামিয়ে চলে গেছেন প্রদীপ।

গত ৯ আগস্ট রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় চোর সন্দেহে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। এদিন তাঁর সঙ্গে প্রাণ হারান প্রদীপের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রূপলাল দাস। প্রদীপের বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম খামার মকিমপুরে। রূপলালের বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে। প্রদীপ তাঁর ভাতিজি জামাই।

প্রদীপকে চোর অপবাদ দিয়ে হত্যার বিষয়টি মানতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী দুলালী রানী। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মোর স্বামী ভালো মানুষ। তাক চোর কয়্যা ওমরা (দৃর্বৃত্ত) মারি ফেলাইলো। ইয়াতে মোর মনোত বড় কষ্ট, শান্তি পাংচে না।’

খামার মকিমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোরা টিনের ছোট্ট একটা বাড়ি। দুই কক্ষের এই বাড়িতেই স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন প্রদীপ। প্রতিবেশীরা জানান, প্রদীপের মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। লোকটার একটা পা না থাকলেও চার্জার ভ্যান চালিয়ে কোনো রকমে সবার মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিচ্ছিলেন। কিন্তু এখন তাদের ঘরে এক বেলার খাবারও নেই।

প্রদীপের বড় ছেলে দুলাল দাস ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর অর্থাভাবে পড়াশোনা থেমে যায়। দুলালের ছোট ভাই আপন বাবু সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আর তাদের বোন পলাশী রানী এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।

প্রতিবেশী ভজন চন্দ্র আচার্য জানান, শত কষ্টেও সন্তানদের পড়ালেখা করানোর ইচ্ছা ছিল প্রদীপের। তাঁর মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে সে বাবা হারাল। আর হয়তো পড়াশোনা করতে পারবে না। পরিবারটির সামনে ঘোর অন্ধকার।

প্রদীপের ছেলে দুলাল জানান, উপজেলা প্রশাসন তাদের ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু এই দিয়ে তো আর সংসার চলবে না। দুলাল মাঝেমধ্যে দিনমজুরি করেন। সেটাও সব সময় পান না। বাবাকে হারিয়ে এখন কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না এই তরুণ।

গ্রামবাসীর দাবি, পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে প্রদীপের বড় ছেলেকে গ্রাম পুলিশের চাকরি দেওয়া হোক। মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মিলনপুর ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশ প্রয়োজন। সেখানে প্রদীপের ছেলের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ