রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার এড়াতে পলাতক থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে জানা যায়, গ্রেফতার এড়াতে গত দুইদিন থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে আসছে নাহ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমান।
সরেজমিনে দেখা যায়, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতে অফিস রুমে অলস সময় কাটাচ্ছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক রেজাউল করিম জুয়েল,মাকছুদুর রহমান মুসা,সোহাগীসহ একাধিক শিক্ষক কর্মচারী। অধ্যক্ষ কোথায় এমন প্রশ্ন করতেই ছুটে এসে শিক্ষক মাকছুদুর রহমান মুসা জানান,স্যার ২ দিন থেকে বিদ্যালয়ে আসে নাহ। তিনি বাড়িতেই আছেন। সোহাগী জানান,একটু ঝামেলা হওয়ার কারণে স্যার ২ দিন থেকে বিদ্যালয়ে আসে নাহ। হয়তো রবিবার থেকে পুনরায় আসবেন। ক্লাস ছেড়ে অফিস রুমে কেনো প্রতিবেদক এমন প্রশ্ন করতেই শিক্ষক রেজাউল করিম জানান,আমি এখনেই ক্লাসে যাচ্ছি। আপনাদের সঙ্গে ক্লাস শেষে কথা বলতেছি। মুহুর্তেই তার সঙ্গে সটকে পড়েন অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারী। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ক্লাসে না গিয়ে কৌশল সটকে পড়েন শিক্ষক রেজাউল করিম।
থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায় মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক রাজ্জাকুর রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলমান। এরই জেরে
গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে তিনটায় উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের সদরপুরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমান নেতৃত্বে হামলা চালায় মমিনুলসহ অজ্ঞাতনামা দূর্বৃত্তরা। এসময় অধ্যক্ষকে মাহেদুলকে বেধড়ক মারধর করে জিম্মি করে তিনটি একশত টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয় ও তার জমি বন্ধকের পঁচানব্বই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়।
এদিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার হয়ে রাতেই মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে অধ্যক্ষ মাহেদুল মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যটা পাওয়ায় মিঠাপুকুর থানায় মামলা রেকর্ডের পরেই গ্রেফতার এড়াতে স্কুলে না এসে মামলা থেকে নিজের নাম কেটে নিতে বিএনপি,জামায়াত,সমন্বয়কসহ বিভিন্ন নেতাদের নিয়ে তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমান।
এদিকে অধ্যক্ষের অনুপস্থিতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ পদে বসতে মরিয়া রাজ্জাকুর রহমানের লালসার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। এবিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা তাজুল জানান,আওয়ামী ট্যাগ দিয়ে রাজ্জাকুরকে অধ্যক্ষ পদে বসাতে মরিয়া শিক্ষক মুসা, জুয়েল ও কাইয়ুম সবাই আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক। সরকার বদলের পর ভোল্ট পাল্টিয়ে এরা বিএনপি সেজে আগের অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে লুটেপুটে খাওয়ার আয়োজন করেছে। এদের লালসার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিতের মুখে পড়েছে। দ্রুত সমাধান করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়বে এই বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমান মুঠোফোনে জানান,আমি অসুস্থ থাকায় বাড়িতে অবস্থান করছি।ছুটি নিয়েছেন কিনা প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বলেন,রবিবারে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার তাছরিন আক্তার জানান,ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমানের প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতির বিষয়ে আমার জানা নেই। তিনি কোন ছুটির দরখাস্ত করেছেন কিনা এবিষয়ে আমি অবগত নেই।
পলাতক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজ্জাকুর রহমান ও ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিল্লুর রহমান মুঠোফোনে জানান, এবিষয়ে বক্তব্য নিতে হলে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। আমি ফোনে কোন বক্তব্য দেই নাহ। ব্যস্ত আছি বলেই ফোন কেটে দেন।অভিযোগ রয়েছে যে কোন সংবাদের ক্ষেত্রেই বক্তব্য না দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যস্ততার অজুহাত দেখান মিঠাপুকুর উপজেলায় সদ্য যোগদানকৃত এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।