সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক বাঁক পরিবর্তনের দিন ছিল ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই। সেদিন রাত ১১টা ২৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছিলেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ঘটনার এক বছরেরও বেশি সময় পর আজ সোমবার (১১ আগস্ট) তাদের মোবাইল কথোপকথনের এই অডিও রেকর্ড প্রকাশ্যে এসেছে। গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে ট্রাইব্যুনালে এই ফোনালাপ আজ জমা দিয়েছে প্রসিকিউশন। তার আগে তদন্ত সংস্থা এই অডিও রেকর্ড জব্দের পর ফরেনসিক করে সত্যতা পেয়েছে।
সেদিন রাতে মোবাইল কথোপকথনের শুরুতে সালাম বিনিময়ের পর শেখ হাসিনাকে ঢাবি ভিসি মাকসুদ কামাল বলেন, প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলেমেয়েরা তালা ভেঙ্গে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে ৪-৫ হাজার ছেলেমেয়ে জমা হয়েছে। মল চত্বরে জমা হয়েছে এবং যেকোনো মুহুর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক করতে পারে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রটেকশনের কথা বলে দিয়েছি।
এক পর্যায়ে মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষার্থীরা সবাই ‘রাজাকার’, ‘রাজাকার’ বলতেছে। এবার শেখ হাসিনার জবাব, রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তাই করবো। একটাও ছাড়বো না, আমি বলে দিছি। এই এতোদিন ধরে আমরা কিন্তু বলিনি অতিরিক্ত…
সেই অডিওতে মাকসুদ কামালকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইংল্যান্ডে ছাত্ররাজনীতির জন্য কয়েকজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল, ঐ রকম অ্যাকশন নেয়া ছাড়া আরও কোন উপায় নাই।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?
এই মন্তব্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তখন ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এরপরই দেশজুড়ে শুরু হয় এক নতুন মাত্রার ছাত্র আন্দোলন।
উল্লেখ্য যে, এই ঘটনার মাত্র তিন সপ্তাহ পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।