গণঅভ্যুত্থানের সময়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইজিডির জরিপ বলছে, গত বছর ৭৫ শতাংশ মানুষ ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি সন্তুষ্ঠ থাকলেও এ বছর তা ১২ শতাংশ কমেছে। ৫১ শতাংশ মানুষ সংস্কারের পর নির্বাচন চায়। আর, আসন ভিত্তিক জরিপের ফলে ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে আছে বিএনপি। তবে জনপ্রিয়তা বেড়েছে এনসিপির।
ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা বিআইজিডি’র জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এই জরিপে নানা বয়সী ৫,৪৮৯ জন নারী পুরুষ অংশ নেন।
সোমবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে’ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপে দেখা যায়, ২৭ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের মধ্যে বিএনপির চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ জামায়াতকে ভোট দিতে চায়। ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির ফেলো অব প্র্যাকটিস সাঈদা সেলিনা আজিজ।
জরিপে গণঅভ্যুত্থানের পররপই ৭৫ ভাগ মানুষ অন্তবর্তী সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও ২০২৫ সালের জুলাইয়ে তা ১২ শতাংশ কমেছে। জরিপ অনুযায়ী পুরোপুরি সংস্কার শেষে নির্বাচন চায় ৫১ ভাগ মানুষ। আসন ভিত্তিক জরিপে ৩৮ শতাংশ বিএনপিকে বিজয়ী দেখছে।
যারা ভোট দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১২ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে, ১০ দশমিক চার শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে, সাত দশমিক তিন শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে এবং দুই দশমিক আট শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দিতে চান বলে জানিয়েছেন।
আট মাস আগে গত অক্টোবর মাসে একই প্রশ্ন করা হলে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপি, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াত ও দুই শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ জরিপ অনুযায়ী আট মাস পরে বিএনপি ও জামায়াতের ভোট কিছুটা কমলেও এনসিপির ভোট সামান্য বেড়েছে।
তবে একটা বড় অংশ যা প্রায় ৪৮ ভাগ, যারা নির্বাচনে ভোট দেয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এর কারণ হিসেবে আলোচকরা বলছেন, মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অন্যদিকে কাকে ভোট চায় তা জরিপকারি দলকে বলতে রাজি হয়নি ১৪ দশমিক চার শতাংশ মানুষ
আর তরুণদের দল এনসিপির ভবিষ্যত ভালো বলেও মনে করেন ৩৭ শতাংশ মানুষ। এছাড়া বর্তমানে ৮০ ভাগ মানুষ উশৃঙ্খল মানুষের কর্মকাণ্ড বা মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বহুবিধ সমস্যায় এই সরকার জর্জরিত মনে করলেও আবার ৭০ ভাগ মানুষ মনে করে অন্তবর্তী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে।
বয়সভেদে দলগুলোর জনসমর্থন নিয়ে যে জরিপ ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে দেখা যায়, ২৭ বছরের নিচে ৯ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে, ১২ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে, সাত শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ এবং চার শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দিতে চায়।
আবার ২৮ থেকে ৩৫ বছরের মানুষের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের জনপ্রিয়তা সমান দেখা গেছে। অর্থাৎ এই বয়সের ১১ শতাংশ মানুষই বিএনপি ও জামায়াতকে ভোট দিতে চায়। তবে ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে বিএনপির জনপ্রিয়তা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। পঞ্চাশোর্ধ ১৬ শতাংশ মানুষ বিএনপি, ৯ শতাংশ মানুষ জামায়াত, ৭ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ এবং চার শতাংশ মানুষের সমর্থন এনসিপির প্রতি।
অন্যদিকে, শিক্ষার স্তরভেদেও রাজনৈতিক দলগুলোর জনসমর্থনের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা গেছে। গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েরই প্রতিই জনসমর্থন রয়েছে শতকরা ১০ শতাংশ করে। গ্রাজুয়েটদের মধ্যে পাঁচ শতাংশ আওয়ামী লীগ এবং চার শতাংশ লোকের সমর্থন এনসিপির প্রতি।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন মানুষের মধ্যে আবার বিএনপির জনসমর্থন বেশি। এই ক্যাটাগরির ১৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন বিএনপির প্রতি, জামায়াতের প্রতি নয় শতাংশ, ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগ এবং দুই শতাংশ মানুষের সমর্থন এনসিপির প্রতি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, আর ১৫ শতাংশ মানুষ মনে করে সুষ্ঠু হবে না আগামী নির্বাচন।