নেত্রকোনার বারহাট্টায় মসজিদের টাকা আত্মসাৎ ও সড়কের খোয়া লুটের অভিযোগে নুরুল ইসলাম টিপন মিয়া (৫০) নামের ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।
টিপন মিয়া উপজেলার সিংধা ইউনিয়ন বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সহসম্পাদক। তিনি একই ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের মাঝপাড়া এলাকার হাজী আব্দুল করিমের (চান্দু মিয়া) ছেলে।
বুধবার (৬ আগষ্ট) উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিক আহমেদ কমল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ৪ আগস্ট টিপন মিয়াকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিক আহমেদ কমল স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টিপন মিয়াকে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর টিপন মিয়া দলীয় প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের মাঝপাড়া জামে মসজিদের সভাপতির পদ দখল করেন। তারপর মসজিদের দান-অনুদানের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করেন। নিজের ছোট ভাইয়ের ১৪০ শতক জমি জোর করে দখল করে চাঁদা দাবি করে আসছেন।
সম্প্রতি গ্রামের নির্মাণাধীন পাকা সড়ক থেকে কয়েক গাড়ি ইটের খোয়া লুট করেন টিপন মিয়া। এ ছাড়া দলীয় প্রভাব ব্যবহার করে এলাকার মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা মিলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগ করেন। পরে টিপন মিয়াকে শোকজ করা হয়।
টিপন মিয়ার ছোট ভাই মো. রুকন মিয়া বলেন, ‘আমার ১৪০ শতাংশ জমি জোর করে দখল করে রেখেছেন টিপন। তাঁর কারণে জমিতে চাষাবাদ করতে পারছি না। তাঁকে চাঁদা না দিলে জমি ছাড়বেন না। তাঁর কারণে এলাকার মানুষ অশান্তিতে রয়েছে। এদিকে মসজিদের টাকা আত্মসাৎ, সড়কের ইটের খোয়া লুট, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো কাজ নেই তিনি করছেন না।’
মল্লিকপুর মাঝপাড়া মসজিদ কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, টিপন নিজে নামাজ না পড়লেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর দলীয় প্রভাবে মসজিদ কমিটির সভাপতি বনে যান। মসজিদের একটি বড় পুকুর রয়েছে, এটি ৩ লাখ টাকায় লিজ দেওয়া হতো। টিপন সভাপতি হয়ে নিজেই পুকুরটি লিজ নেন। তবে টাকা-পয়সা কোনো কিছুই দেননি। এ ছাড়া দান-অনুদানের টাকার কোনো হিসাব নেই।
সিংধা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম ইনচান বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা টিপন করেননি। চাঁদাবাজি, জোর করে জমি দখল, মসজিদের টাকা আত্মসাৎ, সড়কের ইটের খোয়া লুট, নদীর টাকা আত্মসাৎসহ সব অপকর্ম তিনি করছেন। এতে দলের বদনাম হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা ব্যবস্থা নেবেন এই আশা রাখছি।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত টিপন মিয়ার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিক আহমেদ কমল বলেন, ‘টিপন মিয়ার বিরুদ্ধে মসজিদ ও নদীর টাকা আত্মসাৎ, সড়কের ইটের খোয়া লুট, জোর করে জমি দখল ও মানুষকে হয়রানির অভিযোগ পেয়েছি। তাই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, অপকর্ম করে কেউ পার পাবেন না। দলের সুনাম নষ্ট হয়—এমন কাজ করলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।