জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পায়রা চত্বরে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এতে যুদ্ধপরাধের দায়ে আদালতে অভিযুক্ত জামায়াতের একাধিক প্রয়াত নেতার ছবিও টাঙানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার মুখে এটি সরিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এ দিকে এ ঘটনাকে মব সৃষ্টি অভিহিত করে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে শিবির।
মঙ্গলবার দুপুরে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী, বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা টিএসসিতে জড়ো হন এবং ছবি সরিয়ে ফেলার দাবি জানান। পরে শিবিরের সম্মতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম ছবি সম্বলিত ব্যানারটি সরিয়ে নেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রশিবির। দলটির বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খান প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির এর উদ্যোগে টি এস সিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী প্রোগ্রামে একটি মহল মব সৃষ্টির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেছে।’ এটি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবিটিতে দেখা যায়, ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে যুদ্ধপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির মূল সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসাইন সাইদী, আব্দুল কাদের মোল্লা, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাশেম আলী, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছবি টাঙানো হয়।
এ ঘটনায় বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, টিএসসিতে রাজাকারদের ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে জুলাইকে একাত্তরের মুখোমুখি দাঁড় করানোর শিবিরের প্রজেক্টের বিরুদ্ধে এই ক্যাম্পাসের মুক্তিযুদ্ধপন্থী সকল শিক্ষার্থীরা আছেন। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদতেই রাজাকারদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলমান রাখবে কিনা সেটা আমরা দেখবো। যদি তারা সেই কাজ অব্যাহত রাখে তাহলে এই রাজাকারি প্রশাসনকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে।
পরে শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে জড়ো হলে প্রশাসন এটি সরিয়ে নেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, (ছবি টাঙানোর বিষয়ে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ বিভিন্ন অভিযোগে এনেছে। আমরা শিবিরের ছেলেদের ডেকে বলেছি। পরে সরিয়ে ফেলেছি। তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
অন্যদিকে ছাত্রবিশিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিতেই জুলাইকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এ প্রদর্শনের আয়োজন করেছিলাম। এখন বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ছবিগুলো সরিয়ে ফেলার অনুরোধ এসেছে। তাই আমরা ছবিগুলো সরিয়ে ফেলার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছি।