শিরোনাম
৫ আগস্টের মধ্যে ঘোষিত হবে জুলাই ঘোষণাপত্র : মাহফুজ প্রয়োজনে আরও ১৭ বছর আন্দোলন করবে বিএনপি: মির্জা আব্বাস লালমনিরহাটে ইউএনওর স্বাক্ষর স্ক্যান করে দুর্নীতি; জামায়াত নেতাকে শোকজ দিনাজপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মীদের মিছিলের চেষ্টা, ২ জন গ্রেপ্তার রংপুর কমিউনিটি মেডিকেলে এক মাসে ১০০টি সফল হার্ট অপারেশন সম্পন্ন এনসিপির অপরাজনীতি ও জুলাই বিক্রি বন্ধ করতে হবে : মাসুদ ৩ কোটি টাকা বিলের তদবির করতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধীর দুই ছাত্রনেতা আটক মিঠাপুকুরে বাক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ: আসামি পলাতক কাউনিয়ায় অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করায় স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা!  আ. লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি মিলবে
শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে এক দিনেই বিএনপির ২০ নেতা বহিষ্কার

ডেস্ক রিপোর্ট / ৫১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন, সংঘাত-হানাহানি সৃষ্টি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে এক দিনেই বিএনপির ২০ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তাদের বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন। দলটি প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ক্ষেত্রবিশেষে বহিষ্কার কিংবা পদ স্থগিতের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাশাপাশি বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএনপির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। যাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হাইব্রিড নেতাকর্মীদের এ বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা যায়, সে জন্য দলীয় হাইকমান্ড নানা কৌশলে বিরামহীনভাবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে। যেসব নেতাকর্মী অপরাধ-বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে দলের ইমেজ নষ্ট করতে চায়, তা পর্যবেক্ষণে দলের কজন সিনিয়র নেতা ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে তারেক রহমান খোঁজ নিচ্ছেন। যে কারণে অভিযোগ উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এককথায় দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরও কঠোর তারেক রহমান।

তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন- চাঁদাবাজ ও উচ্ছৃঙ্খল নেতাদের কোনো ছাড় নেই। দল দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। প্রয়োজনে বহিষ্কার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে। এ ছাড়া কৌশলের অংশ হিসেবে কোনো শাখার কোনো নেতাকর্মী দখল-চাঁদাবাজি কিংবা বিশৃঙ্খলা করলে ওই ইউনিট কমিটিও বিলুপ্ত করা হবে। এরই মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ দলীয় কোন্দলের জেরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যেসব নেতাকর্মী অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি ও বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের সাংগঠনিকভাবে তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকেই অনেকভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে—এটিই স্বাভাবিক। দলের কোনো কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা-অপরাধের অভিযোগ আসছে। তবে অভিযোগ প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। অপরাধ করে কেউ পার পাচ্ছেন না। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই কোনো অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর তারেক রহমান ও নীতিনির্ধারকদের কঠোরতা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত তদন্ত করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, আধিপত্য বিস্তার, নেতৃত্বের রেষারেষি ও বিরোধ, মূল সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনের মতভিন্নতা, স্বার্থের দ্বন্দ্বে গত বছরের ৭ আগস্ট থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১১ মাসে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৪৭৮টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮০ জনের বেশি নেতাকর্মী নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ১০ মাসে ৬৮ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত নানা অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩ হাজার ২৪৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলও পৃথকভাবে নিজ নিজ সংগঠনের বেপরোয়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। শাস্তির তালিকায় মূল দল বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছেন ১ হাজার ৮০০ জন। তাদের মধ্যে ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, অন্তত ৭০০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ, ১০০ জনকে সতর্ক এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন গোলাম আকবর খন্দকার। ওই ঘটনায় দলীয় পদ হারান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরীও। পৃথক চিঠিতে তার প্রাথমিক সদস্য পদসহ ভাইস চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া একই দিনে দলের ভেতরে সংঘাত ও হানাহানি সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা চরমভাবে লঙ্ঘন করায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল ইসলাম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিনকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ১২ জুলাই ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে হানাহানি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সৈয়দ আলম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ড. টিএম মাহবুবুর রহমান এ ধরনের হিংসাত্মক ও অশোভন আচরণের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে গতকাল বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, অভিযুক্তরা দলের যে স্তরের নেতাকর্মীই হোক না কেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের কারণে দেশব্যাপী যাতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরতে না হয়, সে জন্যই বিএনপির হাইকমান্ড আগেভাগেই সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। যত বড় ত্যাগী নেতাই হোন না কেন, বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ-বিশৃঙ্খলায় জড়িত হলে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। অন্যদিকে প্রায় ১৬০০ জন বহিষ্কৃত নেতাকর্মী তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তবে এ মুহূর্তে বহিষ্কারাদেশ ব্যাপকভাবে প্রত্যাহার না হলেও নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানা গেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ