শরীয়তপুরের নড়িয়ায় কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদকে হুমকি ও গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল জলিল খানের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ে ইউনিফর্ম পরে না আসায় তার ছেলেসহ কয়েকজনকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হতে বলায় এমন কাণ্ড ঘটান তিনি।
রোববার (২৭ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর অভিযুক্তের বিচারের দাবি জানিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই নির্দিষ্ট পোশাক (ইউনিফর্ম) আসে না। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের নিয়ে একটি সভা করে। সেখানে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট পোশাক পরিয়ে পাঠাবেন বলে মতামত দেন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) পুনরায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম পরে আসার কথা বলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ। তখন শিক্ষার্থীরাও রোববার ইউনিফর্ম পরে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়।
রোববার সাতজন ইউনিফর্ম পরে না আসায় তাদের শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে ক্লাস করতে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে আসতে বলেন। অন্যান্য ছাত্ররা প্রধান শিক্ষকের অনুমতি আনতে গেলেও একজন যায়নি। সে বাড়িতে গিয়ে তার বাবা স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুল জলিল খানকে বিষয়টি জানায়। পরে তিনি বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষক হারুন অর রশিদকে হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত আব্দুল জলিল খানের বিচার দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করেন। পরে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা গিয়ে তাদের বুঝিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, “শিক্ষার্থীর বাবা বিদ্যালয়ে এসে আমাকে বলেন, তুই আমার ছেলেকে কেন বের করেছিস? তুই কি ফাটাকেষ্ট হয়ে গেছিস?। এছাড়া গালিগালাজ করেছেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে মিছিল বের করে। পরে দ্রুত আমিসহ আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা গিয়ে ওদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আসলে যিনি ঘটনা ঘটিয়েছেন তার বাবা আমাদের বিদ্যালয়ে জমিদাতা। বিদ্যালয়ের শান্তি রক্ষার্থে বিষয়টি নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ও সম্ভাব্য সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুল জলিল খান বলেন, ‘আমার ছেলে বাড়িতে এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে বিষয়টি জানালে আমি রাগের মাথায় গরম কিছু কথা বলেছি। তবে পরে বিদ্যালয়ের ছেলেদের নিয়ে আমার বাড়ি ভাঙচুর করতে চেয়েছিল। আমি প্রতিবাদ করিনি যেহেতু আমার অন্যায় হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে সবাই এক জায়গায় বসে বিষয়টি সমাধান করে দেবেন।’
ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান বলেন, ‘যেটা খারাপ সেটাকে খারাপ বলতে হবে। দল করি বলে ক্ষমতা দেখাতে হবে, এটা ঠিক না। আমি খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে সুরাহার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাজিবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (আম্বার) বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল ইউনিফর্ম ছাড়া কেউ বিদ্যালয়ে এলে তাকে ক্লাসে বসতে দেওয়া হবে না। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ওই শিক্ষক যারা যারা ইউনিফর্ম পড়ে আসেনি, তাদের বের হতে বলেছিলেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে বসবো। সেখানে দায় যদি ওই ছাত্র ও তার অভিভাবকের হয়ে থাকে, তাহলে এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।