একহাতে দাঁড়িপাল্লায় মরদেহ, অন্য হাতে বিচারের প্ল্যাকার্ড আর পুরো শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা- বিচার ব্যবস্থা সংস্কার ও পুরনো কাঠামো বহাল থাকায় এমন প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক জুলাই যোদ্ধা। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একাধিক নেতাদের ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, রিদম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তবে তার বাড়ি রংপুরে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে বিশাল হাতুড়ি ঘাড়ে ও গলায় শিকল পেঁচিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানো ছবি ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর ডিসি অফিসের সামনে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ১০ মিনিটের জন্য এই প্রতিটি প্রতিবাদ করেন রিদম। তবে অনেকেই বুঝতে না পেরে তাকে ছাত্রলীগ হিসেবে ট্যাগ দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমনকি যারা ফেসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন তাদের দ্রুত ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সদস্য মাহির ফয়সাল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, আমি জানি না এই অপতথ্যটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে। বলা হচ্ছিলো যে রাবি ছাত্রলীগের কেউ একজন ডিসি অফিসের সামনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, আদতে এই ব্যক্তি কোন ছাত্রলীগ নয়, আমাদের রিদম ভাই এবং একজন জুলাইয়ের অন্যতম যোদ্ধা। বিপ্লব চলাকালীন প্রকান্ড কাঠের হাতুড়ি নিয়ে তার বিপ্লবী ছবি এখনও বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়।
এছাড়াও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভাই সবসময় রুখে দাঁড়িয়েছে। রংপুর অঞ্চলের মানুষের দাবিতে যখন আমি প্যারিস রোডে সাধারণ শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম ভাই এসেছিলো এবং আওয়াজ তুলেছিলো।
যারা ভাইকে নিয়ে এহেন পোস্ট দিয়েছে অবশ্যই তাদের কানে এটা দেওয়া হয়েছে যে সে ছাত্রলীগ। পোস্ট যারা করেছেন তারাও জুলাই যোদ্ধা। আমারই কাছের বন্ধু-বান্ধব,ভাই-ব্রাদার। কিন্তু, তাদের তথ্য যাচাই করা উচিত ছিলো।
রাবি চারুকলার এই শিক্ষার্থী একাই দেশের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কত দারুণভাবে একাই প্রতিবাদ জানিয়েছে যখন আমরা কোন মুভমেন্ট কল করলে তার জন্য মানুষ খুঁজে বেরাই।
ন্যায্য কোন বিষয়ে মানুষের প্রয়োজন হয় না। একাই লড়াই চালানো যায়।
আমি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নই। আমার কাছে জুলাইয়ে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলই সম্মানীত। সম্মানীত রিদম ভাইও।
দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছেন, তারা অনতিবিলম্বে এই পোস্টের জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন আমার অনুরোধ। আপনারা কেউ আমার পর নয়। এই ভুল স্বীকার করে নিতে হবে।
অন্যথায় আমি কারও সাথেই যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখবো না। আমি জানি, রংপুরের রাজপথে আমি একজন ছাপোষা মানুষ। তারপরও দাবি নয়, অনুরোধ জানালাম। আপাতত আমিই দুঃখপ্রকাশ করলাম ভাইয়ের কাছে এহেন ঘটনার জন্য। রংপুর বৈষম বিরোধী আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন,
গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার অতীতের মত বর্তমান দুরবস্থা নিয়ে রংপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একটি অভিনব প্রতিবাদের ছবি লক্ষ্য করেছি। এও নজরে এসেছে ছাত্রলীগের কেউ একজন সেটা করেছে। ছাত্রলীগ এখনি এইভাবে মাঠে! খবরটা শুনে আঁতকে উঠি! রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক। যাই বলেন একটু খারাপই লেগেছে। সত্যি বলতে একটু অসুস্থ থাকায় খুব একটা ভাবতে পারিনি বিষয়টা নিয়ে। আমার কেন জানি মনে হয় এই মূহুর্তে আওয়ামিলীগের কেউ কারও শেল্টার বা কোনো কিছুর ওপর ভর করা ছাড়া প্রকাশ্যে ফাংশন করার নৈতিক অবস্থায় তো নাই ই সাহসও করতে পারবেনা। আমরা যে আওয়ামিলীগকে আশপাশে ঘুরতে দেখে দুশ্চিন্তায়। একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন বিপ্লব বিক্রেতাদের কারও ছত্র ছায়ায় তারা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। সে নিয়ে আরেকদিন বিস্তর আলাপ হবে।
জেনে নেয়া যাক এই অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ করা মানুষটা কে?
মানুষটা আর কেউ না বিপ্লবী রিদম ভাই যার ফেইসবুক আইডি Pagol Pothik
বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার জন্য গেলো জুলাইয়ে যে হাজার হাজার প্রাণ চলে গেলো। এই জুলাই কি তার পরিবর্তনের মুখ দেখেছে?
যদি বলেন না দেখেনি।
তাহলে কবে দেখবে?
সমাজ থেকে অনিয়ম-অনাচার, অবিচার কি কখনোই দূর হবেনা?
একজন রিদম যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগেও কথা বলেছে ভবিষ্যতেও বলবে। যিনি জীবনে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন। অভিনব এই প্রতিবাদের জন্য স্যালুট রিদম ভাইকে।