পানবাড়ি গ্রামের মাটি যেমন উর্বর, তেমনি তার বুকেই জন্ম নেয় কবি মুকুল হোসেন।
কবি মুকুল লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার গর্ব। পিতা হাজী মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন ও মাতা কুলছুম বেগমের সন্তান মুকুল পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সপ্তম।
শৈশবে মনসুর নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার যাত্রা শুরু হয় তাঁর। সরকারি কাজী আব্দুল গনি ডিগ্রি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক অধ্যয়নের সময়ই জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। তবে শিল্পের প্রতি আকর্ষণ ম্লান হয়নি। গান, কবিতা, নাটক ছিল তাঁর হৃদয়সঙ্গী। প্রবাসী জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও কবিতার ছন্দে, গানের সুরে এবং গল্পের ভাষায় নিজেকে খুঁজে ফেরেন তিনি,একটা সময় তিনি হয়ে ওঠেন চিত্রশিল্পী ।
২০০৮ সালে কর্মজীবনের প্রয়োজনে সিঙ্গাপুরে যাত্রা হলেও, আত্মীয়-পরিজনহীন একাকীত্বে তাঁর কলমই হয়ে ওঠে সঙ্গী। কর্মফাঁকে, রাতের নির্জনতায় লিখতে থাকেন কবিতা, গল্প, আর গান চুপিসারে সঞ্চয় হতে থাকে একেকটি অনুভবের খণ্ডচিত্র।
২০১৬ সালের লেবার ডেতে *Ethos Books Singapore* থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ইংরেজি কবিতার সংকলন *Me Migrant* অভিবাসী জীবনের অন্তর্লীন ব্যথা-বেদনার অনুপম দলিল। পরের বছর *Braving Life* প্রকাশিত হয় ইংরেজি ও চাইনিজ ভাষায়, যেখানে তিনি সাহসের বুনন দিয়ে জীবনের শুষ্ক দিনগুলোতে ছড়িয়ে দেন আশার রঙ। বাংলাদেশেও তাঁর লেখালেখির স্বাক্ষর রেখে গেছেন *সিঙ্গাপুরের দিনগুলি* প্রকাশিত হয় *অন্বেষা পাবলিকেশন*-এর ব্যানারে। তবে তার প্রকাশিত ছোট গল্প উপন্যাস এবং কবিতার বই বিভিন্ন পাবলিকেশন থেকে পাবলিস্ট হয়েছে বাংলাদেশে।
লেখার জগৎ ছাড়াও মুকুল হোসেন একজন নিষ্ঠাবান স্বেচ্ছাসেবক। *The Salvation Army*, *HealthServe Community Clinic*, *Ray of Hope*, এবং *SG Accident Help Center*-এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন। তাঁদের শ্রমজীবী বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছেন মনের আবেগে, হৃদয়ের টানে। এই অভিজ্ঞান থেকে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে *Long-time Volunteer Appreciation Award* গ্রহণ করেন *Gardens by the Bay*-এর শুভপরিবেশে।
ভবিষ্যতের স্বপ্নে আঁকা তাঁর ক্যানভাসেও রয়েছে কাব্যের ছোঁয়া। তিনি চান, নিজ গ্রামে একটি আর্ট স্কুল গড়ে তুলতে যেখানে শিশুরা রঙে রূপে আবিষ্কার করবে তাদের অনুভব। এছাড়া “মুকুল হোপ শেল্টার” নামে একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন গঠনের ভাবনা আছে, যার অন্তর্ভুক্ত হবে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক অসহায় মানুষের জন্য নিরাময়, শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা।
উল্লেখ্য যে মুকুল হোসেন তার ফ্রী সময় গুলোতে যে একাকী চেষ্টা করেন এবং সিঙ্গাপুরের আর্টিস্ট মিস্টার বারি ইওর কাছে শিখেন। সেই আটগুলো বিক্রি করে স্বেচ্ছায় আঘাতপ্রাপ্ত প্রবাসী শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য অর্থ স্বেচ্ছায় দান করে থাকেন।
রাষ্ট্রপতির হাতে নিজের লেখা সিঙ্গাপুর কে উৎসর্গ করা “ও সিঙ্গাপুর” গানের লিরিক তুলে দেওয়ার মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রশংসায় বলেন
“মুকুল, তোমার সম্পর্কে যতই জেনেছি, ততই মুগ্ধ হয়েছি। তোমার ম্যাডাম এবং আমি তোমার বই পড়েছি অসাধারণ লিখেছো। তুমি আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছো। আমরা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। তুমি অনেক দূর এগিয়ে যাবে এটা আমার বিশ্বাস।” এ যেন এক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া বার্তা সিঙ্গাপুর প্রবাসী কবি মুকুল হোসেনের জন্য।
এই সম্মান শুধু কবি মুকুল হোসেনের একক অর্জন নয় বরং এটি অভিবাসী সব বাংলাদেশির জন্য এক অনুপম গৌরবের প্রতীক।