শিরোনাম
ঢাকা-বুড়িমারী রেল চলাচল নিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি বিএনপি নেতাকে মালা পরানো সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে গোপালগঞ্জে বদলি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘দুর্বল’ উল্লেখ করে পদত্যাগ দাবি জামায়াতের এখন যারা রাজাকার গালি দিচ্ছে, ভবিষ্যতে জনতা তাদেরও প্রত্যাখ্যান করবে: ফয়জুল করীম দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও প্রাথমিকে ফিরছে ‘বৃত্তি পরীক্ষা’, জানা গেল সম্ভাব্য তারিখ বিএনপিতে এক কোটি নতুন সদস্য নেওয়া হবে: রিজভী পীরগাছায় ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ৩ বিএনপিকে নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে রংপুরে যুবদলের বিক্ষোভ বিয়ে করবে বলে ছেলে কত আশায় বাড়ি বানাল কিন্তু বউ আর আনতে পারলাম না’ জাল টাকার নোটসহ জালনোট প্রতারণা চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ।
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

১৭ জুলাই: সকল বাধা ভেঙ্গে গায়েবানা জানাজার দিন

ডেস্ক রিপোর্ট / ২২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

২০২৪ সালের ১৭ জুলাই (বুধবার) চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে নিহত শিক্ষার্থীদের মাগফেরাত কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন আন্দোলনকারীরা।

এদিন ভোরেই আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দেন এবং এসব শিক্ষাঙ্গনকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাবি ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল খালি করতে নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে সরকার দেশের ইন্টারনেট সেবাদানকারী কোম্পানিগুলোকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

পবিত্র আশুরার সরকারি ছুটির দিনেও থেমে থাকেনি আন্দোলন। ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল। দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

এইদিন আন্দোলনকারীরা রাজধানীর মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের কাজলা অংশে অবস্থিত টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেন। শনির আখড়া ও কাজলার মধ্যবর্তী এলাকায় অন্তত ২০টি স্থানে মধ্যরাত পর্যন্ত আগুন জ্বলে।

এর ঠিক একদিন আগে, ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় সারাদেশে অন্তত ছয় শিক্ষার্থী নিহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, সায়েন্সল্যাব এলাকায় নিহত দুই ছাত্র এবং চট্টগ্রামে নিহত ছাত্রদলের নেতা ওয়াসিম আকরামসহ আরও তিনজন।

নিহতদের স্মরণে ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জানাজা শুরুর আগেই পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিকেল চারটায় আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে জানাজা আদায় করেন।

জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কফিন বহন করে শপথ নেন এবং এক কণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এই আন্দোলন আমরা বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে টিএসসি অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ফের বাধা দেয় এবং কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন ও বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেন।

ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “পুলিশ ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের আটকে দিয়েছে। ভেতরের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।”

একইদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গায়েবানা জানাজায় বাধা দেয় পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিছু জায়গায় তারা হামলা চালায় বলেও অভিযোগ ওঠে।

১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে হলে না থাকার নির্দেশ দেয়। জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের ঘোষণা দেয়। শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘোষণার পর অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যার মধ্যেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেও, অনেকে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন।

এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ টিএসসি এলাকায় এসে বলেন, “পুলিশ হল খালি করার অনুমতি পেয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হল না ছাড়লে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

১৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।

এদিন রাতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্র সমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।’

একইদিন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মন্তব্য করেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে চলে গেছে। কাজেই আর বসে থাকার সময় নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।’

১৭ জুলাই শহীদ আবু সাঈদকে রংপুরের পীরগঞ্জে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। সকাল সোয়া ৯টায় জাফরপাড়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে সকাল সোয়া ১০টায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহতদের স্মরণে এদিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। পুলিশ সেখানে বাধা দেয়। জানাজা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে মুসল্লিদের বাধা দেওয়া হয়েছে। সরকার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারত। কিন্তু তারা বর্বর হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে।’

চট্টগ্রামেও বিকেল ৪টায় লালদীঘি ময়দানে কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে হাজারো ছাত্র-জনতা অংশ নেন। এছাড়া দেশের আরও অন্তত ১০টি স্থানে সড়ক-মহাসড়ক এবং দুটি স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ