শিরোনাম
দিনাজপুরে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০, মোটরসাইকেল ভাঙচুর চাঁদাবাজদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে জাহান্নামের চৌরাস্তায় পাঠিয়ে দেয়া হবে’ মিটফোর্ডের ঘটনায় সকল ভাষা হারিয়ে ফেলেছি: জামায়াতের আমির ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা, মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ ও নিন্দা ঢাকা মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বেরোবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ পাথর মেরে ব্যবসায়ী হত্যা, শাস্তি দাবি করে একই লেখা পোস্ট করলেন রাকিব-নাছির বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ আ. লীগের খুনের দায় হাসিনার ওপর বর্তায়, তেমনি বিএনপির দায় আপনার ঘাড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে খুনের ঘটনায় আরও ২ জন গ্রেপ্তার ডেঙ্গুতে আরও ১৩৮ জন হাসপাতালে ভর্তি
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন

পুরান ঢাকায় জনসম্মুখে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার এক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী

ডেস্ক রিপোর্ট / ৪৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা। পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটক। সামনে মানুষের জটলা। পাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। এক ব্যক্তির প্রায় বস্ত্রহীন রক্তাক্ত দেহ ফটকের ভেতর থেকে টেনে বের করছে দুই যুবক। কালো প্যান্ট পরা খালি গায়ের এক তরুণ তাঁর গালে চড় মারছে। কালো গেঞ্জি পরা আরেকজন এসে ওই ব্যক্তির বুকের ওপর লাফাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে একই কাজ করছে। এক পর্যায়ে আরেকজন এসে তাঁর মাথায় লাথি মারে।

ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার পর মরদেহের ওপর চলে এই বর্বরতা। সিসিটিভিতে ধরা পড়া ছবিতে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। লোকজন ঔৎসুক্য নিয়ে দেখছে। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতায় তারাও হতবিহ্বল। কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের ক্যাম্প ছিল পাশেই। তারাও কেউ এগিয়ে আসেনি। ভিডিওতে হত্যা ও বীভৎসতায় জড়িতদের হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কিছু বলতে শোনা যায়।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার পর এই বর্বরতার বিষয়টি সামনে আসে। গতকাল রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘এমন বীভৎসতা আগে দেখিনি।’ তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তরুণদের একটা অংশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় না থাকলে বিপদ আরও বাড়বে। রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, সেটি অবর্ণনীয়। এই আচরণ চিন্তার বাইরে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার কয়েক যুবক সোহাগকে বুধবার দুপুরে ডেকে নেয়। সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরোনো তামার তার ও অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙাড়ি জিনিসের ব্যবসা করতেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

শুধু সোহাগ হত্যা নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গতকাল চট্টগ্রামে এক গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ ১১ টুকরো করা হয়েছে। তাঁর পলাতক স্বামীকে পুলিশ যশোর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

সম্প্রতি গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে কারখানায় চুরির অপবাদ দিয়ে হৃদয় (১৯) নামের এক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৮ মে রাতে রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে এক যুবককে প্রকাশ্যে কোপানো হয়। ১৬ মে রাজধানীর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন পাতাম রেস্টুরেন্ট এলাকায় হত্যা করা হয় সামিউর রহমানকে (আলভি) নামে এক ব্যক্তিকে।

সোহাগ হত্যার পেছনে ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ 

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোহাগকে হত্যা করে তাঁর পূর্বপরিচিতরা। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গতকাল মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিনের কাছে পাওয়া গেছে একটি পিস্তল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দু’জনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম।

নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।’

নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙাড়ি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামে একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙাড়ি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। অনেক পরিশ্রমে তিনি সচ্ছলতার মুখ দেখেন। অভিযুক্ত মহিনসহ বেশ কয়েকজন তাঁর বন্ধুস্থানীয়। মাঝেমধ্যে বাসায় যেতেন, খাওয়া-দাওয়া করতেন।

সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিল স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তাঁর গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেয় মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সোহানা মেটাল।

পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগকে প্রথমে মারধর করে মহিনরা। মারতে মারতে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে নেওয়া হয়। সোহাগ বাঁচার অনেক চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশকে ফোন করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় আরেকটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মহিনসহ অন্যরা সোহাগকে ওই এলাকার ভাঙাড়ি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়। বিনিময়ে তাদের লাভের একটি অংশ দেওয়ার কথা ছিল। টাকা অঙ্ক বড় দেখে তারা ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। সেখান থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

পুরান ঢাকার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল বারেক দাবি করেন, নিহত সোহাগ এবং হত্যায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিন আগে যুবদল করতেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে তিনি তাদের ভালোভাবে চেনেন না। তারা দলীয় কোনো কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন না।

হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এমন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেও সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। জানতে চাইলে মিটফোর্ড হাসপাতালের আনসার ক্যাম্পের প্লাটুন কমান্ডার আবদুর রউফ বলেন, ঘটনাস্থল হাসপাতালের পেছনের দিকের এলাকা। ওই দিকে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আনসার দায়িত্ব পালন করে। ঘটনার সময় সেখানে কেউ দায়িত্বে ছিল না। তখন জরুরি বিভাগে দায়িত্ব ছিল। তিনি বলেন, ‘তবে খবর পেয়ে আমরা গিয়ে রাস্তায় মৃতদেহ পাই।

এ ঘটনার পর হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন ২৪ ঘণ্টা ৩ নম্বর ফটক এলাকায় টহল থাকবে। নয়তো ফটকটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানান আবদুর রউফ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ