শিরোনাম
দিনাজপুরে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০, মোটরসাইকেল ভাঙচুর চাঁদাবাজদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে জাহান্নামের চৌরাস্তায় পাঠিয়ে দেয়া হবে’ মিটফোর্ডের ঘটনায় সকল ভাষা হারিয়ে ফেলেছি: জামায়াতের আমির ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা, মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ ও নিন্দা ঢাকা মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বেরোবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ পাথর মেরে ব্যবসায়ী হত্যা, শাস্তি দাবি করে একই লেখা পোস্ট করলেন রাকিব-নাছির বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ আ. লীগের খুনের দায় হাসিনার ওপর বর্তায়, তেমনি বিএনপির দায় আপনার ঘাড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে খুনের ঘটনায় আরও ২ জন গ্রেপ্তার ডেঙ্গুতে আরও ১৩৮ জন হাসপাতালে ভর্তি
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন

এসএসসিতে ৩.৩৮ পাওয়া আল-আমিন এখন বিসিএস ক্যাডার

ডেস্ক রিপোর্ট / ৩০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফল। এবারের ফলাফলে দেখা গেছে, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অনেক শিক্ষার্থী খুব কাছে গিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি, ফলে হতাশা কাজ করছে অনেকের মধ্যেই। তবে, জিপিএ-৫ না পেলেও জীবনে সফল হওয়া সম্ভব—এমনই এক অনুপ্রেরণাদায়ী উদাহরণ হয়ে উঠেছেন বিসিএস ক্যাডার শাকিল আল-আমিন।

২০০৬ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৩.৩৮ অর্জন করেন শাকিল। যদিও এ ফলাফলটি অনেকের কাছে হতাশাজনক মনে হতে পারে। তবে সেসময় তার গ্রামে এই ফলাফলই ছিল সেরা। পরিবারের আর্থিক সংকটের মধ্যেও তিনি থেমে যাননি। আত্মীয়ের এনজিওতে চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বেছে নেন উচ্চশিক্ষার পথ।

ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন নেত্রকোণা সরকারি কলেজে। থাকার জায়গার অভাবে লজিং বাড়িতে উঠেন এবং বিনিময়ে শুরু করেন ছাত্র পড়ানো। হারিকেনের আলোয় রাত জেগে পড়াশোনা চালিয়ে যান। বাবা একটি ছোট গরু বিক্রি করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে পাঠান। তারপরই ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি তার লক্ষ্যপানে।

এইচএসসিতে তিনি জিপিএ ৪.১০ অর্জন করেন। এ ফলাফলে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে চান্স পেয়েছেন। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়বেন তাই ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফলভাবে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে নিজের চেষ্টায় কঠোর পরিশ্রম করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ৩৬তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন শিক্ষা ক্যাডার পদে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজে কর্মরত রয়েছেন।

গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাকিল আল-আমিন তার এই সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এসএসসিতে ৩.৩৮ পাওয়ার পর আমি কখনোই আপসেট হইনি। আমার বন্ধুদের ৫০ শতাংশই A কিংবা A+ পাওয়া। হারিকেনের নিভু নিভু আলোয় ভোর ৪টায় উঠে পড়তে শুরু করলাম দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠে। আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম—তিনবেলা ভাত, একটু মাথা গুজার ঠাঁই আর হারিকেনের কেরোসিন পাচ্ছি। এই সাপোর্ট ছিলো আমার জন্য তীব্র অনুপ্রেরণাদায়ক।’

তিনি আরও বলেন, ‘কলেজের স্যার ও সহপাঠীদের মুখে শুনতাম ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথায় কুট কুট করত পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার বায়না। তখন বুঝেছি স্বপ্ন সেটা নয় যা ঘুমিয়ে দেখি, স্বপ্ন সেটাই যা আমাকে ঘুমাতে দেয় না।’

নিজের অধ্যবসায়ের কথা জানিয়ে আল-আমিন বলেন, ‘দৈনিক অন্তত ১২-১৪ ঘণ্টা পড়তাম। লজিং বাড়ির লোকজন বলতো, তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা। আমি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করলাম। শেষ পর্যন্ত এইচএসসিতে ৪.১০ পেলাম। তখনই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সুযোগ মিললো।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে শাকিল বলেন, ‘আমার পাশে মহাত্রাণকর্তা হিসেবে দাঁড়ালেন আমার বাবা। একটা ছোট গরু বিক্রি করে পাঠালেন ময়মনসিংহে। ভর্তি কোচিং ও থাকা-খাওয়ার দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে শুধু পড়াশোনায় মন দিলাম। আমি ছোটবেলায় ডাক্তার লুৎফর রহমানের বই পড়ে জেনেছিলাম, পরিশ্রম দিয়ে মানুষ তার যেকোনো স্বপ্ন জয় করতে পারে। আমি বড় হয়ে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে শিখি, ‘পরিশ্রম কখনো পরিশ্রমীকে বিনা পারিশ্রমিকে বিদায় করে না।’

শাকিল আরও বলেন, ‘থমাস কার্লাইল বলেছিলেন, সব অনিশ্চয়তা, হতাশা আর বাধা সত্ত্বেও নিজের সবটুকু দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টাই শক্তিমান মানুষকে দুর্বলদের থেকে আলাদা করে। আমি মনে করি, মানুষ তার স্বপ্ন ও চেষ্টার সমান বড়ো। তাই হতাশ না হয়ে নিজেকে আবিষ্কার করো। নিজের শক্তিকে মানসিক দাসত্বের শৃঙ্খলে বেঁধে রেখো না। ঘুরে দাঁড়াও।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ