নওগাঁর বদলগাছী মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ পদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। একই পদে দুইজন অধ্যক্ষ দাবির ফলে বুধবার (২ জুলাই) সকালে এইচএসসি পরীক্ষার সময় কলেজ চত্বরে ঘটে ধাক্কাধাক্কি, উত্তেজনা এবং হাতাহাতির মতো ঘটনা।
জানা যায়, কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে অফিস কক্ষে প্রবেশ করে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে চেয়ার ছাড়ার নির্দেশ দেন। নিজের সঙ্গে আনা একটি চেয়ার নিয়ে তিনি বসে ঘোষণা দেন, ‘পুরনো এডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।’
এরপরই দুপক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে একপর্যায়ে ইমামুল হোসেন কলেজ ত্যাগ করেন।
স্থানীয়রা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো পক্ষীয় দ্বন্দ্বে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পাঠদান চায়, অথচ বার বার এর ব্যত্যয় ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করে নতুন এডহক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আপিল করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন এডহক কমিটি অনুমোদন দিয়ে তাকে পুনর্বহাল করা হয়।
এদিকে ইমামুল হোসেন দাবি করছেন, হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে পূর্ববর্তী এডহক কমিটির সভাপতি তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যদিও বর্তমান কমিটি বলছে, সেই কমিটির মেয়াদ এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
অধ্যক্ষ মাহবুব আলম বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছি। রিটের এখনো কোনো রায় হয়নি, কিন্তু তড়িঘড়ি করে অন্য পক্ষ চেয়ারে বসার চেষ্টা করছে, যা সম্পূর্ণ অশোভন।’
বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল বলেন, ‘বিষয়টি এখন আদালতের বিবেচনাধীন। হাইকোর্ট যাকে দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেবে, তিনিই দায়িত্বে থাকবেন। কিন্তু রায়ের আগেই এমন চেয়ার দখলের চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, দ্রুত প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে বদলগাছী মহিলা কলেজে শিক্ষার মান ও পরিবেশ ভেঙে পড়বে। বিষয়টি সমাধানে কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।