লালমনিরহাটের পাটগ্রামে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির দুই কর্মীকে আটক করে এক মাসের কারাদণ্ড দেয় উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানার সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পুলিশের ৮ সদস্য রয়েছেন।
বুধবার (২ জলাই) রাতে পাটগ্রামের অ-বাজার এলাকা থেকে বেলাল ও সোহেল নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাস জানান, তাদের কাছ থেকে ১ লাখেরও অধিক টাকার রিসিভ রিসিভ মানি উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের এক মাসের সাজা প্রদান করা হয়।
ঘটনার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির একটি সূত্র দাবি করছেন, ‘অন্যায়ভাবে’ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির সমর্থকরা থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা এবং একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপির দাবি, সংঘর্ষে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা বাদশা জাহাঙ্গীর মোস্তাজির চপলসহ প্রায় ১৫ জন আহত হন।
পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের সরোরবাজার এলাকায় চাঁদাবাজির সময় বেলাল ও সোহেলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
বেলাল ও সোহেল স্থানীয় শ্রমিক দলের নেতা উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মুক্ত করতেই ওয়ালিউর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে।
তবে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেল এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি থানায় ছিলাম না। আমাদের কোনো নেতাকর্মীও এই হামলায় জড়িত নন। যাদের আটক করা হয়েছে তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তই নন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপিকে জড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।’
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে বেলাল হোসেন পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে এবং সোহেল রানা চপল মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রাত ১টার দিকে লিখেছেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে পাটগ্রামে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরা পড়লে তাদের ছিনিয়ে আনতেই পরিকল্পিতভাবে থানা ঘেরাও, হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদেরও মারধর করে।’
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে আছি। ডিআইজি স্যার ও জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’
এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।