শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

লালমনিরহাটে শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার সারাবছরই তালাবদ্ধ

কায়সারুল আলম সোহাগ, কালীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ / ৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

 

 

বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম শেখ ফজলল করিম। যিনি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় ১৮৮৩ সালের ১৪ এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেছিলেন । ১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মভিটায়ই ইন্তেকাল করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে নানা রচনার জন্য তিনি ‘সাহিত্য বিশারদ’, ‘কাব্যরত্নাকার’ ও ‘নীতি ভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

২০০৫ সালে কবি শেখ ফজলুল করিমের স্মৃতি রক্ষার্থে কাকিনা বাজারে একটি দুই তলা ভবনে নির্মিত পাঠাগারটি এখন পরিত্যাক্ত, আবর্জনায় ভরপুর। সেখানে নেই কোন কেয়ারটেকার, নেই পাঠক, রয়েছে বইয়ের সংকট। সারাবছরই থাকে তালাবদ্ধ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পাঠাগারটি তালাবদ্ধ, বাহিরের প্লাস্টারও খসে পড়েছে,মুল ফটকের দুই পাশে ও সামনের জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে দোকান । আর ফটকটির ভেতরে ও বাইরে আবর্জনার স্তূপ, জঙ্গলে ভরপুর ।

জানাগেছে, কবির স্মৃতি ধরে রাখতে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু পরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় এক নেতার ‘রোষানলে’ পড়ে পাঠাগারটি। ফলে সেটির দিকে আর কেউ তাকায়নি, দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোগের অভাবে পাঠাগারটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। কবির জন্মভিটায় থাকা স্মৃতিচিহ্নগুলোও যেন হারাতে বসেছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজনের উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর আগে কবি স্মৃতি পাঠাগারটি বছরখানেক খোলা ছিল। পরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় সেটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের পলাতক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তাহির তাহু কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি গণপাঠাগারের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। গত প্রায় ১৬ বছরে ওই এলাকার সবকিছুতেই ‘দাদাগিরি’ করতেন তিনি। কিন্তু সভাপতি হয়েও পাঠাগার চালু কিংবা কবির স্মৃতি রক্ষায় নেননি কোনো উদ্যোগ। স্থানীয় ‘নাজির’ পরিবারের সন্তান তাহু পূর্বসূরিদের মতোই কখনো কবি পরিবারকে সহ্য করতেন না। ফলে কবি প্রসঙ্গে তিনি ছিলেন উদাসীন।

উত্তর বাংলা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন,কবির স্মৃতি রক্ষার্থে পাঠাগার গড়ে তোলা হলেও কোনদিন পাঠাগারটি খোলা দেখিনি।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, ১৮৮২ সালের ১৪ এপ্রিল সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন কবি শেখ ফজলল করিম। মাত্র ১৩ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী বিনবিনা গ্রামের গনি মোহাম্মদ সর্দারের মেয়ে বসিরন নেছা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় কবির। ১৮৯৯ সালে ইংরেজি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। তিনি মোট ৫৫টি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। সংরক্ষনের অভাবে যার অনেকগুলোর এখন আর হদিস মিলছে না। বাংলা ১৩২৩ সনে ভারতের নদীয়া সাহিত্য পরিষদ তাকে সাহিত্য বিশারদ উপাধিতে ভূষিত করে।

১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কবি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের পর অরক্ষিত হয়ে পড়ে কবি শেখ ফজলল করিমের গ্রামের বাড়ী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ