ছাত্র-জনতার জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ‘হার্ট অ্যাটাক’ করে মারা যাওয়া ছমেছ উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে জামিন দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২২ জুন) বিকেলে রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন। এর আগে, দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো. সোয়েবুর রহমানের আদালতে জামিন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে তিনি আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ জুলাই হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে।
মাহমুদুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আল মামুন জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যে মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়েছে মামলার বাদী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি আসামিকে চেনেনও না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর যে শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেফতার করা জুলাই চেতনার পরিপন্থি। তিনি জানান, প্রথমে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত বক্তব্য শোনার পর পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন জানালে বিচারক আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে, জামিন আবেদনের আগে ও পরে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। তারা মাহমুদুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান এবং এই মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছমেছ উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের রের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। তারা অবিলম্বে মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান এবং ঘটনাটিকে স্বাধীন চিন্তার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা দেন। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যুর ১০ মাস পর দায়ের করা হত্যা মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তারা এর নেপথ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুর রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া মুদিদোকানি ছমেছ উদ্দিনকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা বানানোসহ ‘জাতীয় বীর’ দেখিয়ে এই হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় এজাহারে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বাকি ৫২ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীনকেও আসামি করা হয়।
জাতীয় বীর দেখিয়ে ১০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট আর ৫ লাখ টাকা জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছমেছ উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে করা জুলাই আন্দোলনের শহীদদের তালিকায় ১৯ নম্বরে তার নাম রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীর পরামর্শে পুলিশ বিভাগের একটি দল তার বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীকে দেখে ভীত-সন্ত্রন্ত্র হয়ে জ্ঞান হারান। পরবর্তীতে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে ছমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম ও তার ছেলে আশিকুর রহমান স্বীকার করেছেন ছমেছ পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তারা মামলা করেছেন পুলিশের কথামতো। মামলায় কারা আসামি হয়েছে তা তারা জানেন না, শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে কাগজে। জেলা প্রশাসনের তথ্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের সাথে মামলার বাদীর এজাহারে গরমিল রয়েছে। জেলা প্রশাসন ছমেছ উদ্দিনকে ছমেট উদ্দিন নামে দেখানোসহ তার মৃত্যুর স্থান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেখিয়েছে। কিন্তু এজাহারে বলা হয়েছে, প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছমেছ উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ছমেছ উদ্দিনের কবরে টাঙানো সাইনবোর্ডের লেখাতেও ‘হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু’ হয়েছে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে।