রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন

সংগ্রাম, সাহস ও নেতৃত্বের প্রতীক মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম

মাইনুল,মিঠাপুকুর প্রতিনিধি / ১৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

সময়টা ৩ মার্চ ১৯৮০।

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ২নং রানীপুকুর ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম। তাঁর বাবা মোঃ নুরুল ইসলাম রুপাল ছিলেন একজন সম্মানিত শিক্ষক, যিনি শুধু পেশাগত দায়িত্বেই নয়, মানবিক গুণেও ছিলেন সমাজের শ্রদ্ধার পাত্র। মা মোছাঃ সাদিকা বেগম (বাবলি) ছিলেন এক আদর্শ ও স্নেহময় গৃহিণী।

পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে তিনি একজন। তাঁর বড় ভাই মোঃ নাজমুল সাহেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একজন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন — যিনি দেশের জন্য নিবেদিত ছিলেন সম্মান ও দায়িত্ববোধে।

শিক্ষাজীবন ও রাজনীতিতে সূচনা

শৈশবেই শিক্ষার প্রতি আগ্রহ এবং নেতৃত্বের বীজ বপিত হয় তাঁর হৃদয়ে। পড়াশোনা করেন রানীপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এরপর রানীপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। ছাত্রজীবনের উষালগ্নেই তিনি যুক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে — দেশের প্রতি ভালোবাসা ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বোঝার বয়স থেকেই।

১৯৯০ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজে বিএসসি পড়াকালীন তিনি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তরুণ বয়সে সেই সাহসিক পদক্ষেপ ছিল একটি বৃহৎ রাজনৈতিক পথচলার সূচনা।

ছাত্র রাজনীতি থেকে মূল রাজনীতিতে উত্তরণ

ছাত্ররাজনীতিতে নিজের প্রতিভা, দলের প্রতি নিষ্ঠা ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আস্থা অর্জন করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে নিজ জন্মভূমি রানীপুকুরে ফিরে আসেন এবং ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য হিসেবে রাজনীতির মাঠে সক্রিয়ভাবে অবতীর্ণ হন।

২০০৩ সালে সংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। সভাপতির অনুপস্থিতিতে একাই দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন — সমন্বয়, সংগঠন ও কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে নেন রানীপুকুর বিএনপিকে।

দুঃসময়ের দৃঢ় সাহসী মুখ

২০০৬ সালের পর শুরু হয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দমন-পীড়ন, এবং গুম-খুনের রাজনীতি। বিএনপির নেতাকর্মীরা হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও জুলুমের শিকার হন। কেউ পলায়নপর, কেউ কারাগারে। কিন্তু মোজাহিদুল ইসলাম ছিলেন অবিচল — অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন।

সরকারি চাকরির সুযোগও কেবল রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে হারাতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও তিনি দলের পতাকা ধরে রেখেছেন মাথা উঁচু করে।

২০১০ সালে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, আর ২০১৫ সালে পুনরায় সেই পদে আসীন হন। একই বছরে মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সদস্য পদও লাভ করেন।

নির্বাচনী লড়াই ও গণমানুষের ভালোবাসা

২০২২ সালে তিনি রানীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। কিন্তু জনরায়ের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে ক্ষমতাসীন দল প্রশাসনের সহায়তায় জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁকে বিজয় থেকে বঞ্চিত করে। এটা ছিল গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের এক নির্মম উদাহরণ।

তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। ২০২৩ সালে উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান। আর ২০২৪ সালে, যখন জনতার জাগরণে স্বৈরাচারের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র ফিরে আসে — মোজাহিদুল ইসলাম ছিলেন সেই ইতিহাসের নীরব সৈনিকদের একজন।

অবশেষে নেতৃত্বের স্বীকৃতি

২০২৪ সালে তিনি রানীপুকুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। এবং ২০২৫ সালের দিবার্ষিক সম্মেলনে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই হাজারো নেতাকর্মীর নির্ভরতা ও ভালোবাসায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হন।

এটি ছিল তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এক অনন্য স্বীকৃতি।

বর্তমানে তিনি আসন্ন মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আশা করেন, গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী নেতাকর্মীরা তাঁকে একটি করে মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়ী করবেন।

শেষ কথা

মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম — এক সাহসী নাম, সংগ্রামী নেতৃত্বের প্রতীক, আদর্শ ও ত্যাগের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

যিনি কেবল রাজনীতি করেন না, বরং নেতৃত্ব দেন ভালোবাসা দিয়ে, আগুনঝরা সময়েও আপস না করে প্রমাণ করেছেন — সত্যিকারের নেতা হতে গেলে পায়ের নিচে নয়, মাথার উপর রাখতে হয় মানুষের আস্থা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ