বয়স ৪০ ছুঁইছুঁই উচ্চতাও ৪০ ইঞ্চি দেখতে অবিকল শিশুর মতোই কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর আছর উদ্দিন ছমির। শুধু তাই নয়, শিশুসুলভ আচরণ নিয়ে সারাদিন খেলাধুলাও করছেন গ্রামের অন্য শিশুদের সঙ্গে।
উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের চেয়ারম্যান পাড়ার আজিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে আছর উদ্দিন ছমির। বর্তমানে তার দরিদ্র মা-বাবা দেখাশোনা করলেও আছর উদ্দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তার পরিবার।
উন্নত চিকিৎসায় জন্মগত ত্রুটির কারণে এমন রোগে আক্রান্ত এসব সন্তান কিছুটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া অনেক রকম জন্মগত ত্রুটি মায়ের গর্ভকালীন উপযুক্ত পদক্ষেপ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা দিয়ে প্রতিকার করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির বাইরে ৪ থেকে ৭ বছর বয়সি শিশুদের সঙ্গে এক মনেই খেলাধুলা করছেন আছর উদ্দিন ছমির। এই শিশুদের দেখে বুঝার উপায় নেই সেখানে খেলা করছে ৪০ বছরের ছমির।
ছমিরের স্বজন ও সমবয়সীরা জানান, ভোটার আইডিতে বয়স কিছুটা কম হলেও তার বয়স আসলে ৪০ ছুঁইছুঁই। অথচ ৮ বছরের শিশুর মতোই তার দৈহিক আকৃতি ও মানসিক অবস্থা। এই দরিদ্র দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে আছর উদ্দিন ছমির দ্বিতীয় এবং ছেলের মধ্যে বড়।
ছমিরের মা বাবা জানান, জন্মের পর থেকেই সে অস্বাভাবিক। বয়স হলেও তাকে শিশুর মতোই লালন-পালন করছেন তারা। ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে দেখিয়েছেন চিকিৎসকও। তারপরও শরীরে নানা সমস্যা নিয়ে শিশুই থেকে গেছেন আছর উদ্দিন। নিজেদের অবর্তমানে এই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত তারা।
ছমিরের মা আছিয়া বেগম বলেন, ছমির একবার কান্না শুরু করলে সারাদিন কাদতে থাকে, কেউ থামাতে পারে না। আমাদের বয়স হয়েছে যত দিন বেঁচে আছি ততদিন দেখাশুনার মানুষ আছে, তারপর কি হবে সে চিন্তায় ভালো লাগে না। ওকে রেখে কোথাও যেতে পারি না। মনটা ছটফট করে। তার সঙ্গে সবসময় একজনকে থাকতে হয়। গোসল, খাওয়া, জামাকাপড় পড়িয়ে দিতে হয়। ছোট ছেলেটা গার্মেন্টন্সে চাকরি করে মাসে কিছু করে টাকা পাঠায়। আমরা আশ-পাশের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলছে। এভাবে যতটুকু পারি ছেলেকে আদর যত্নে রাখার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, ছমিরের কথা চিন্তা করে বোনের মেয়েকে ছোট ছেলের বউ করে ঘরে এনেছি। আমাদের অবর্তমানে তারা ছমিরের দেখাশুনা করবে এই আশায়। তবুও দুঃশ্চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না।
ছমিরের বাবা আজিম উদ্দিন বলেন, অনেক কষ্টে দিন যায় বাপু, এতদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকলাম। এখন মাথা গোজার এক টুকরো জমি হলেও ফসলি জমি নেই। বয়সের কারনে দিন মুজুরিও করতে পারি না। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। তিনি সরকার ও বিত্তবানদের কাছে ছমিরের জন্য সহায়তা কামনা করেন।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর ও হাসু বলেন, ছমির বয়সে আমাদের বড়। ছোট বেলায় আমরা এক সাথে খেলাধুলা করেছি। এখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা ছমিরের খেলার সাথী। ছমির এখনও শিশুর মতো জীবন যাপন করলেও তার ছোট ভাই বিয়ে করে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
ছমিরের খেলার সাথী চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী লিমা ও জিনিয়া বলে, সারাদিন আমরা এক সাথে খেলি। ছমির অনেক ভালো। কখনো রাগ করে না।
স্থানীয় দোকানি আছর উদ্দিন বলেন, ছমিরকে ছোট বেলা থেকেই প্রতিবন্ধীর মতো দেখছি। সব সময় ছোট বাচ্চাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করে। তারপর যতক্ষন দোকান খোলা থাকে আমার দোকানেই বসে থাকে। কেউ কিছু কিনে দিলে খায়। ছমির অনেক সহজ-সরল তার কোনো শারীরিক বৃদ্ধি নেই। বয়সে ওর ছোটরা বিয়ে করা সন্তানের বাবা হলেও ও এখনো শিশুর মতোই রয়ে গেছে।
তিলাই ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, আছর উদ্দিন ছমিরকে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ সমন্বয় করে তাকে সহযোগিতা করার আশ্বস দেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা: আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ অজানা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিন গত সমস্যা ও গর্ভাবস্থায় ত্রুটির কারণে এ ধরনের বামন আকৃতির শিশুর জন্ম হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টিকর ও আয়োডিনযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এই ক্রুটি অনেকাংশে এড়ানো যায়।
তিনি আরো বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে কিছুটা হলেও সুস্থ জীবন যাপন করানো সম্ভব।