শিরোনাম
নিয়মিতই রাত জাগছেন? জেনে নিন রাত জাগার পাঁচ কুফল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর গেল কোথায়? রাতের আঁধারে শত শত ট্রাকে করে সরানো হচ্ছে ‘সাদা পাথর’ এবার অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের উপর প্রকাশ্যে হামলা, গুরুতর আহত হার্টের রিংয়ের দাম কমাতে যাচ্ছে আরও ২৮ কোম্পানি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ‘কলিজা খুলে’ ফেলার হুমকি দিলেন বিএনপি নেতা সত্য কথা বলার কারণে সারজিসের বিরুদ্ধে বিএনপি মামলা করেছে: ফয়জুল করীম সরকারি জমি দখল করে বৈষম্যবিরোধী তিন ছাত্রনেতার রেস্তোরাঁ রংপুরের হারাগাছে র‌্যাব-১৩ এর অভিযানে ৮০ বোতল ফেনসিডিল, মোটরসাইকেলসহ একজন গ্রেফতার চাল নিতে আসা দিনমজুরকে ইউএনওর লাঠিপেটা, ভিডিও ভাইরাল
বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর গেল কোথায়?

ডেস্ক রিপোর্ট / ১১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

সিলেটের স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান রিপন বলেছেন, ‘এখানকার ভয়াবহ অবস্থা, আজকে হয়তো লুটপাট নেই। কিন্তু পাথর যা নিয়ে গেছে তাতে এ পর্যটন স্পট মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে এখন আর পাথর বলতে কিছু নেই।’

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর নামক পর্যটন স্পটে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেন তিনি। প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ধলাই নদের উৎসমুখে ভেসে আসা পাথরের বিশাল স্তূপের কারণে প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে তৈরি এ স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ সাড়া ফেলেছিল।

তিনি জানান, ‘আগের সাথে তুলনা করতে গেলে এখন ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর নেই বললেই চলে। প্রায় ৭৫ শতাংশ পাথর এখান থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ২৫ শতাংশ পাথর এখন এখানে আছে, যেটা বিজিবির ক্যাম্পের সাথে লাগোয়া স্থানে আছে।’

স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে সাদা পাথর তুলে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে পরিবেশবিদ কাসমির রেজা অভিযোগ করেন, ‘এক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকর অভিযান দেখা যাচ্ছে না।’

তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের দাবি প্রশাসনের পদক্ষেপ চলমান রয়েছে এবং প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের পদক্ষেপ চলমান আছে। আইনি যত প্রক্রিয়া করা যায় আমরা সবগুলাই করেছি। এখানে মোবাইল কোর্টসহ টাস্কফোর্সের অভিযান এবং বিভিন্ন সময় নিয়মিত মামলা পর্যন্ত দায়ের করা হয়েছে।’

এরপরেও কেন পাথর লুট বন্ধ করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘তারপরেও এরকম অবস্থা। সোমবার (১১ আগস্ট) আমাদের অভিযান হয়েছে। মঙ্গলবারও ইনফ্যাক্ট অভিযান হবে। তারপরেও কেন এরকম হচ্ছে সেটা জানার জন্য বুধবার (১৩ আগস্ট) একটা সভা ডেকেছি আমরা। সভা করে এ বিষয়টা আমরা বোঝার চেষ্টা করবে। সে অনুযায়ী আমরা বিকল্প বা অন্য করণীয় আছে কিনা তা নির্ধারণ করবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক রেজা দাবি করেন, প্রশাসন কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।

কেন সাদা পাথর নামে পরিচিত ও কীভাবে তৈরি হয়?

সিলেট নগরী থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝরনাগুলো থেকে যে নদীর উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সেই নদীর নাম ধলাই নদ।

পাহাড় থেকে ঝরনার পানির স্রোতে এই নদী বেয়েই সাদা পাথর নেমে আসে। ধলাই নদের উৎসমুখের এই জায়গার নাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। ঠিক এক বছর আগের এই স্থানের সৌন্দর্যকে ‘অনবদ্য ক্যানভাসের’ সাথে তুলনা করেন কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক শাফকাত জামিল।

তিনি বলেন, ‘যতদূর চোখ যায় দুই দিকে কেবল সাদা পাথর আর মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল আরেকদিকে পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। আপনার মনে হবে কাশ্মীরের মতো স্বর্গরাজ্য। সৌন্দর্যের এক অনবদ্য এক ক্যানভাস।’

জামিল জানান, এই স্থান গত দশ-বারো বছরে মূলত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বেশি পরিচিতি পেয়েছে। কারণ হিসেবে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির কথা তুলে ধরেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে মূলত এই স্থানটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়।

সিলেটের পরিবেশবিদ রেজা জানান, ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমনকি লিজও দেওয়া হয়নি ওই স্থান।

রেজা আরও বলেন, ‘গত চার বছরে এখান থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়নি, এখনতো প্রশাসনের কার্যকর অভিযানও দেখছি না।’

স্থানীয়রা জানান, ওই স্থানের একশ মিটারের মধ্যে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্পের কাছে শুধুমাত্র সাদা পাথর এখন অবশিষ্ট রয়েছে। বিজিবি ক্যাম্পের পূর্ব দিকে এই সাদা পাথর পর্যটন স্পট অবস্থিত।

পরিবেশগতভাবে ‘সাদা পাথর’ স্থান গুরুত্বপূর্ণ কেন? ক্ষতিকর প্রভাব কী?

পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এই স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা স্বচ্ছ পানির এ আধার এই এলাকার বেশ কিছু স্থানের খাবার পানির চাহিদা মেটায়।

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘প্রথম গুরুত্ব হচ্ছে এই পাথরগুলো যেখান থেকে ন্যাচারালি আসে, ওইখান থেকে পানি প্রবাহের ভয়ঙ্কর রকম তোড় তৈরি হয়। মানে পানি প্রবাহের তীব্রতা বেড়ে যায়। যেখানে তোড় বেশি সেখানে পাথর জমে। পাথরের কাজ হয় ওই তোড়ের পানিটাকে ভেঙে ভেঙে টুকরো টুকরো করে তার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এটা একটা প্রাকৃতিক ধাপ।’

তিনি জানান, শুধু তাই নয় পানির মধ্যে অক্সিজেন সংশ্লেষ করাও এর কাজ যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘সোলার অ্যাকুয়াটিক ন্যাচারাল প্রসেস অব ট্রিটমেন্ট’ বলা হয়। প্রকৃতির এই পুরো সিস্টেমে যদি কোন ব্যাঘাত ঘটানো হয় অর্থাৎ পাথর তুলে ফেলা হলে তখন সিস্টেম ভেঙে পড়ে বলে জানান এ পরিবেশবিদ।

হাবিব বলেন, ‘এর ফলে দুপাশে প্লাবনের পরিমাণ বাড়ে, ভাঙনের সৃষ্টি হয় এবং পানিটাকে গোড়াতেই সাংঘাতিকভাবে পলিউটেড (দূষিত) করে ফেলে। মনে রাখা দরকার ওই অঞ্চলের অনেক জায়গায় খাবার পানির স্বল্পতা মেটায় এই পানি।’

এসব ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের কারণে প্রকৃতিগতভাবে অন্যান্য ক্ষতি তৈরির অভিঘাত সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ