নীলফামারীর ডিমলায় মাদক কেনাবেচার টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছে উল্টো ঝুলিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জ গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৩০) নামের এক যুবককে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) গভীর রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান একই গ্রামের রমজান আলী ও তার সহযোগী আল আমিন। মাদক কেনার টাকাকে কেন্দ্র করে প্রথমে তাকে বাড়িতে বেঁধে মারধর করা হয় এবং পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পরে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে, রাত আনুমানিক ২টার দিকে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি ইউক্যালিপটাস গাছে উল্টো ঝুলিয়ে আবারও নির্মমভাবে মারধর করা হয়। নির্যাতনের ওই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।
পরদিন শুক্রবার সকালে নির্যাতনকারীরা নিজেদের দোষ আড়াল করতে আবুল কালামের বিরুদ্ধে ‘ছুরি হামলা’র অভিযোগ তুলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ডিমলা থানা পুলিশ তাকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্য একটি মামলায় নীলফামারী জেলা কারাগারে পাঠায়।
এলাকাবাসী জানান, আবুল কালাম আজাদ কোনো চোর-ডাকাত নন। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তারা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি দেখে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজেই গ্রাম পুলিশ দিয়ে তার বাধন খুলে দেই এবং ডিমলা থানার ওসিকে ফোন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলি। ওসি প্রথমে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানালে আমি ইউএনও মহোদয়ের সহযোগিতা চাই। পরে ইউএনও স্যারের নির্দেশে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, “ঘটনার দিন সকালে প্যানেল চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ডিমলা থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলি।”
ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফজলে এলাহী বলেন, “ইউএনও স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে আবুল কালামকে উদ্ধার করা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একটি পূর্বের মামলায় জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় তার পিতা বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য নজির বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। তারা দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।