লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সুদের কারবারি হিসেবে পরিচিত আব্দুর রাজ্জাককে (৪২) যৌথ বাহিনীর একটি দল সোমবার রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফাঁকা চেক, সাদা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, স্বর্ণালঙ্কার এবং সুদের হিসাব সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ আটক করে।
অভিযানের সময় রাজ্জাকের বাড়ি থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের স্বাক্ষরিত শতাধিক ফাঁকা চেক, ৩০০ টাকার মূল্যের শতাধিক সাদা স্ট্যাম্প, ৮–১০টি সুদের হিসাব খাতা এবং প্রতারণামূলক মামলার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়। অভিযানে দেশীয় অস্ত্রও জব্দ করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, রাজ্জাক দীর্ঘ এক যুগ ধরে কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ও অসহায় মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চড়া সুদে টাকা ধার দিতেন। একবার তার খপ্পরে পড়লে সহজে বের হওয়া যেত না। টাকা দেওয়ার সময় তিনি ধারগ্রহীতাদের কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করতেন। পরে সময়মতো সুদের টাকা পরিশোধ না করলে ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলা ও সম্পত্তি দখলের মতো অপকর্ম করতেন।
রাজ্জাকের বিরুদ্ধে এমন ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে তুষভান্ডার বাজারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা রাজ্জাকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত সম্পদ প্রকৃত মালিকদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
এসময় ভুক্তভোগী আতোয়ার রহমান বলেন,“মাত্র তিন লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম, কিন্তু রাজ্জাককে কোটি টাকার উপরে পরিশোধ করতে হয়েছে । এমনকি সে আমার জমিও লিখে নিতে চেয়েছিল। আমি তার বিচার চাই।”
স্থানীয়দের দাবি, রাজ্জাকের অত্যাচারে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও প্রভাব ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে রাজ্জাককে আটক করে এবং কালীগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। বর্তমানে সে কারাগারে আটক রয়েছে ।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম মালিক বলেন,
“আব্দুর রাজ্জাক কালীগঞ্জের একজন পরিচিত সুদ কারবারি। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিল। সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”