মা আদর করে কপালে টিপ দিয়ে দিচ্ছেন ২০ মাস বয়সী সন্তান মাসুম বিল্লাহকে৷ তবে মায়ের মনে ভিতর কষ্ট আর মলিন চেহারায় ভাঁজ পড়ে আছে সন্তানের চিকিৎসা। মাসুম কে দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও জন্মের পর থেকেই পায়ুপথ বন্ধ হয়ে আছে। শিশু মাসুম জানেন না তার এই রোগের কথা। জন্মের তিন দিনের মাথায় এ সমস্যা দেখা দেয়। তার দুইদিন পর অপারেশন করতে হয় মাসুম কে। তবে পায়ুপথের অপারেশন করতে গিয়ে প্রসাবের পথে ছিদ্র হলে ওই রাতেই করানো আর একটি অপারেশন। অভাবের সংসারে ছেলে জন্মের পর আনন্দে থাকার কথা থাকলেও হয়েছে এর ভিন্ন। এখন সেই সন্তানের পিছনে টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন নি শিশু মাসুম বিল্লাহ।
২০ মাস বয়সী মাসুম বিল্লাহ কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মাচাবান্দা নামাচর এলাকার শফিকুল ইসলাম ও মোরশেদা বেগম দম্পতির ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে সব ছোট।
জানা গেছে, ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। দিনমজুর বাবার পক্ষে সন্তানের চিকিৎসার ভার বহন করে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে। জমাজমি বলতে বাড়িভিটার তিনশতক জমিটুকুই সম্বল। ছেলে জন্মের পর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজ ঘরের দুটি গরু বিক্রি করতে হয়েছে। তবে এখনো ছেলের চিকিৎসা থেমে নেই, প্রয়োজন আরও লক্ষাধিক টাকা।
মাসুম বিল্লাহ’র মা মোরশেদা বেগম বলেন, চার ছেলে মেয়ের সংসারে খুব অভাবে দিন পার করতে হচ্ছে৷ এর মধ্যের ছোট ছেলের অপারেশন করাতে গিতে ইতিমধ্যে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা শেষ হয়েছে। ডাক্তার বলছে আরও একটি অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু দিনমজুরের কাজ করে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব প্রায়। এখন আরও ৮০ হাজার টাকা লাগবে। এই টাকা কই পাবো?
তিনি আরও বলেন, এর আগে অপারেশন টাকা জোগাড় করতে হাটবাজারে হাত পাততে হয়েছে। মানুষ আর কত দিবে? সমাজসেবা থেকে আবেদন করে দুইহাজার টাকা ও প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কিন্তু টাকার দরকার অনেক। এখন কেউ যদি আমার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সহযোগীতা করত তাহলের ছেলের অপারেশন করাতে পারতাম।
মাসুম বিল্লাহর পায়ুপথ বন্ধ থাকায় পেটের একপাশে ছিদ্র করে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিয়েছে চিকিৎসক। আদরের সন্তানের এমন অসুস্থতায় প্রতিবেশিরাও আশাহত।
স্থানীয়রা জানান, শফিকুল পেশায় একজন দিনমজুর। দিন আনে দিন খার তার পক্ষে এত পয়সা খরচ করে ছেলের চিকিৎসা করার সামর্থ নেই।
প্রতিবেশি বিল্লাহ’র চাচি বলেন, মানুষ আর কত দিবে? সবারই সংসার আছে এরপরে কম বেশি অনেকেই সহযোগিতা করেছে। এখন আরও টাকার দরকার কিন্তু উপায় না পেয়ে এই বাড়িভিটে বিক্রির উপক্রম হয়েছে। এই সময়ে ধনীব্যক্তিদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
চিলমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নাজমুল হাসান জানান, আমরা মাসুম বিল্লাহকে প্রতিবন্ধী কার্ডের আওতায় নিয়ে এসেছি। এরপরও যদি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের আর্থিক অনুদানের সুযোগ আসে তাহলে অবশ্যই সহায়তা করা হবে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি শুনলাম। যদি আমাদের কাছে আসে তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি সহায়তা করা হবে।