কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার পরিচিত সাংবাদিক দম্পতি মো. কাইসার হামিদ (৫১) ও মোছা. রোকেয়া আক্তার (৪৪) এবার দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নতুন উদাহরণ তৈরি করেছেন। বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে সফল হন তাঁরা। দুজনেই পেয়েছেন জিপিএ ৪.১১।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন তাঁদের একটি কষ্ট ছিল—এসএসসি পাস না করা। সেই অপূর্ণতা দূর করতে এবার নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন এবং সফল হন।
কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত ও রোকেয়া আক্তার দৈনিক বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। দুজনের বাবাই ছিলেন শিক্ষক, এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও উচ্চশিক্ষিত।
কাইসার হামিদ বলেন, “সাংবাদিকতায় আমার বয়স ৩০ বছরের বেশি। সমাজ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু একটাই কষ্ট ছিল—এসএসসি পাস না করা। বাইরে গেলে কেউ কেউ ব্যঙ্গ করতেন, এমনকি বলতেন, ‘এসএসসি না পাস করে সাংবাদিকতা করেন কীভাবে?’ সেসব কথা খুব লাগত। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, পরীক্ষা দেব।”
রোকেয়া আক্তার বলেন, “কম বয়সে বিয়ে, এরপর সন্তান। তাই আর পড়াশোনায় ফেরা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এই কষ্ট বুকের মধ্যে লালন করতাম। অবশেষে বুঝলাম, সাহস করে পরীক্ষা না দিলে শান্তি মিলবে না। এবার সেটা করে দেখালাম।”
দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে নাসরিন সুলতানা স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। দ্বিতীয় মেয়ে জেসমিন সুলতানা স্নাতক শেষ বর্ষে, তৃতীয় সন্তান মাইমুনা নার্সিংয়ে অধ্যয়নরত। ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন নবম শ্রেণিতে ও আবদুল্লাহ ফাহিম সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মেয়ে জেসমিন বলেন, “মা–বাবার এসএসসি পাস করা আমাদের ভাইবোনদের জন্য গর্বের। এটা আমাদের কাছে আনন্দ আর প্রেরণার ব্যাপার।”
দম্পতির গ্রামের বাড়ি কুলিয়ারচরের গোবরিয়া গ্রামে। রোকেয়ার পিত্রালয় কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামে। ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।