জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গঠনতন্ত্র ঠিক নেই। এ ছাড়া দেশের ২৫ উপজেলা বা থানায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোটার (ন্যূনতম ২০০ জন) সদস্যের অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি; এমন অভিযোগ এনেছে নির্বাচন কমিশন।
কোনো কোনো উপজেলায় একই ব্যক্তিকে বারবার ভোটার সমর্থক হিসেবে দেখানো হয়েছে। নিবন্ধন চেয়ে দলটির করা আবেদনের প্রাথমিক বাছাইয়ে এমন ত্রুটি পেয়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।
এসব ত্রুটি সংশোধন করতে দলটিকে ১৫ দিন সময় দিয়েছে সংস্থাটি।
এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে ইতোমধ্যে এসংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’ নামীয় দলের গত ২২ জুন দাখিলকৃত আবেদন নির্বাচন কমিশনে যাচাই করা হয়েছে। ওই আবেদন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮, বিজ্ঞপ্তি ও ফরম পূরণের নির্দেশিকার আলোকে যাচাই করে প্রাথমিকভাবে নিম্নরূপ ত্রুটি/ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়—
১) ঠিকানাসহ দলের সব কার্যকর জেলা দপ্তরের তালিকা প্রদান করা হয়নি; ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তর ভাড়া নেওয়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই।
২) ঠিকানাসহ সব উপজেলা/থানা দপ্তরের তালিকা প্রদান করা হয়নি; ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার (ন্যূনতম ২০০ জন) সদস্যের অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি (কিছু উপজেলা/থানার বইয়ে অন্য উপজেলা/থানার ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে একই ভোটারকে বারবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ডিমলা উপজেলায় প্রায় ২০ জন সদস্যের এনআইডি নম্বর পাওয়া যায়নি)।
৩) ইটনা উপজেলার দপ্তর ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই; হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি।
৪) আবেদন ফরম-১ এর ফিল্ড নং ৯ এ তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই; আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত তহবিলের উৎসের বিবরণীতেও তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই।
৫) নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর নেই।
৬) দলের গঠনতন্ত্রে-গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০৭(১)(খ) (ঈ) অনুসারে আবেদনকারী দলের গঠনতন্ত্রে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা বা ক্ষেত্রমত, জেলা কমিটির সদস্যগণ কর্তৃক প্রস্তুত প্যানেল হতে দলের কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক বিবেচনাপূর্বক সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিধান রাখা হয়নি।
৭) এছাড়া দলের কোনো দলিল বা কার্যক্রম সংবিধান পরিপন্থী নয় এবং দলে ‘কোলাবোরেটর (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭২’র অধীন দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নেই—এ ধরনের প্রত্যয়নপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি।
৮) দলের গঠনতন্ত্র গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০খ(১)(খ) ও ৯০(১) এর বিধান অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে সংশোধিত গঠনতন্ত্র দাখিল করা আবশ্যক।
৯) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০ক, ১০২, ১০গ ও ৯০২, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৪, ৫ ও ৬, বিজ্ঞপ্তি ও ফরম পূরণের নির্দেশিকার শর্তাদি প্রতিপালনের নিমিত্ত আবেদনের ত্রুটি/ঘাটতি সংশোধনক্রমে প্রামাণিক দলিল দাখিল করা আবশ্যক।
উক্ত চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বিধি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দল কর্তৃক ওপরে বর্ণিত ত্রুটি/ঘাটতি সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সংশোধন (যদি থাকে) এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দলের দাখিলকৃত তথ্য ও দলিলসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা/থানা দপ্তরসমূহ সরেজমিন যাচাই করা হবে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিক বাছাই শেষে দলগুলোকে ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাদের ত্রুটি ঠিক করে দিতে হবে।’
ইসি কর্মকর্তারা আরও জানান, গত ২২ জুন পর্যন্ত ১৪৪টি দলটি ১৪৭টি আবেদন দাখিল করে। এতে সব দলই প্রাথমিক যাচাইয়ে পাস করতে পারেনি। তাই সব দলকেই সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।