এবার সারাদেশে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ ২১ হাজার ২২৮টি গবাদি পশু। সে হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪৪টি কম।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার পশু মজুত ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। সে অনুযায়ী ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি পশু অবিক্রীত রয়েছে। গত বছর মজুত ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি পশু। সে অনুযায়ী ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯টি পশু অবিক্রীত থেকে যায়।
২০২৩ সালে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়, অর্থাৎ ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫২১টি পশু অবিক্রীত ছিল। আর ২০২২ সালে সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর যেসব পশু কোরবানি হয়েছে, এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি, ছাগল-ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি ও অন্যান্য ৯৬০টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের (স্ট্র্যাটিফায়েড র্যান্ডম স্যাম্পলিং) ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এবারের হিসাব করেছে। প্রতিটি উপজেলার তিনটি গ্রাম (ছোট, মাঝারি ও বড়) থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ১ শতাংশ নমুনা। এত বেশি পশু অবিক্রীত থাকার কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল। তাই পশু অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
এদিকে, এত পশু অবিক্রীত থাকায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারি ও ব্যাপারীরা। যারা বড় গরু হাটে তুলেছিলেন, এর অধিকাংশই অবিক্রীত রয়েছে। চড়া দামের খাবার খাইয়ে, ব্যাংক ঋণ নিয়ে যারা খামার করেছেন, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপদে।
মানিকগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি ও মৌসুমি পশু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। সে তুলনায় বড় গরুর ক্রেতা ছিল খুব কম।
অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে, যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩টি। এর পর রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ, ৩ লাখ ৮৩ গাজার ১৬২টি।
সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে, এই সংখ্যা ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১টি। এর পর ঢাকা বিভাগে, ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি। চট্টগ্রাম বিভাগে কোরবানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি, খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৭৮৩টি এবং রংপুর বিভাগে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি।
খামারিরা বলছেন, যারা গরু বিক্রি করতে পারেননি, উল্টো ঢাকায় এসে তাদের বাড়তি কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন গরু পালন করতেই হিমশিম খেতে হবে। কারণ আগের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করলে নতুন ঋণও পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে গোখাদ্যের দাম চড়া।
খামারিরা দাবি করছেন, সাধারণত বিত্তবানরাই বড় গরুর ক্রেতা। গত বছরের ছাগলকাণ্ড ও ব্রাহমা জাতের গরুর বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনায় আসার পর বড় গরুর ক্রেতা কমে গেছে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা। এ কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন কেউ কেউ।
অনেক খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক বড় গরু এবার অবিক্রীত রয়ে গেছে। তাছাড়া গরুর দামও ছিল কম। অথচ এসব গরুর পেছনে খরচ হয় অনেক বেশি। সে কারণে খামারিদের বড় অংশই এখন ছোট ও মাঝারি গরু লালনপালনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।