রংপুর বদরগঞ্জে ‘সব আমলের ক্ষমতাধর মানিক বাহিনীর’ পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি কর্মী লাভলু হত্যা মামলার আসামি জাহিদুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে গত ৫ এপ্রিল মানিক বাহিনীর হামলায় নিহত লাভলু মিয়াকে উল্টো ‘অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন জাহিদুল।
যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় সিসিটিভির ফুটেজে নিরস্ত্র লাভলু মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করতে দেখা গেছে। জাহিদুলের এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লাভলু মিয়ার পরিবার।
লাভলু মিয়া বদরগঞ্জ উপজেলার মধুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের অনুসারী ছিলেন। গত ৫ এপ্রিল বদরগঞ্জে একটি দোকান ঘরকে কেন্দ্র করে এই হামলা ও নিহতের ঘটনা ঘটে। এ হত্যা মামলার ১নং আসামি করা হয়েছে কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মানিক বাহিনীর প্রধান শহিদুল হক ওরফে মানিককে। জাহিদুল ইসলাম এ হত্যা মামলার ৭নং আসামি। গত ২৭ এপ্রিল মানিক, তাঁর ছেলে তমাল, জাহিদুলসহ ৯ আসামি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, বদরগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে ইশতিয়াক আহমেদ নামে এক ব্যক্তির দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে টিনের ব্যবসা করেন তিনি। দোকান মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী তাঁর আরও তিন বছর দোকান ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ থাকলেও ইশতিয়াক আহমেদ তাঁকে দোকান ছেড়ে দিতে বলেন।
জাহিদুলের দাবি, ২ এপ্রিল তাঁর দোকানে হামলা ও লুটপাট হয়েছিল। তখন তিনি কালুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সারোয়ান জাহান মানিক জানান। লিখিত বক্তব্যে শহিদুল হক ওরফে মানিককে ‘দুঃসময়ে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকা ব্যবসায়ী‘ বলে উল্লেখ করেন জাহিদুল।
জাহিদুলের ভাষ্য, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৫ এপ্রিল তাঁরা মানবন্ধনের প্রস্তুতি নিলে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের নির্দেশে তাঁর বাসা থেকে ইশতিয়াক বাবু, তাঁর ভগ্নিপতি মনিরুজ্জামান, হুমায়ুন কবির ওরফে ডিস মানিক ও লাভলু মিয়া প্রকাশ্যে হাতে লাঠি, ছোরা, বল্লমসহ সন্ত্রাসী বাহিনী সাথে নিয়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যানার, ফেস্টুন, টেবিল চেয়ার ও মাইক ভেঙ্গে চুরমার করেন।
তবে ৫ এপ্রিল ঘটনাস্থলের সিসিসিভির ফুটেজে দেখা গেছে, লাভলু মিয়া ওই দিন নিরস্ত্র ছিলেন। ঘটনাস্থলে একদল সন্ত্রাসী তাঁকেসহ এলোপাথারি চাপাতি, ছুরি দিয়ে কোপাচ্ছে। পরে তাঁকে স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে লাভলু মিয়ার মৃত্যু হয়।
তাহলে লাভলু মিয়াকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বলা হলো কেন, তাঁর কাছে কোনো প্রমাণ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো প্রমাণ নেই বলে সাংবাদিকদের জানান জাহিদুল।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে জাহিদুলের এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ছেলে ও হত্যা মামলার বাদি রায়হান কবির।
রায়হান কবির বলেন, শহিদুল হক ওরফে মানিক ও তাঁর ছেলে তানভীর আহম্মদ ওরফে তমালের নেতৃত্বে তাঁর বাবার ওপর হামলা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজেও একদল সন্ত্রাসী তাঁর বাবাকে রামদা ও ছুরি দিয়ে কোপাচ্ছে এমন ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। এখন আসামিরা তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কেএম আতিকুর রহমান বলেন, লাভলু হত্যার ঘটনায় দুই মামলায় অনেক আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। মামলায় বাদীকে কোনো ধরণের হুমকি দিলে তাঁকে সাধারণ ডায়েরি করতে বলা হয়েছে।