শিরোনাম
তৌহিদ আফ্রিদির ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ জাতিসংঘে একই দিনে ভাষণ দেবেন ইউনূস-শেহবাজ-মোদি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ফেন্সিডিলসহ যুবক আটক ছাত্রদল নেতাদের ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার করার অভিযোগ -দিনাজপুর প্রেসক্লাবে সম্মেলন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান করবেন তারেক রহমান: টুকু সব ভুলে গেলেও কুরআন ভোলেননি সুন্দরগঞ্জের মানসিক ভারসাম্যহীন হাফেজ রাশিদুল কলকাতায় মেয়েসহ বাহার আটক, ছাড়া পেল হাসিনার সহযোগিতায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টা হোক আর রাজনীতিবিদ, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না: সারজিস আলম আমার স্ত্রী ৬ মাসের প্রেগন্যান্ট’, গ্রেপ্তারের পর তৌহিদ আফ্রিদি
সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০১:২৫ অপরাহ্ন

সব ভুলে গেলেও কুরআন ভোলেননি সুন্দরগঞ্জের মানসিক ভারসাম্যহীন হাফেজ রাশিদুল

স্থানীয় রিপোর্ট / ৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

বাবা মৃত জবেদ আলী ও মা রাশেদা বেগমের ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে রাশিদুল বড়। দারিদ্র্য এ দম্পতির আশা ছিল- ছেলে বড় হয়ে একদিন কুরআনের হাফেজ হবে; কিন্তু বাদসাধে তাদের নিয়তি।

দুষ্টুমি করায় ছেলেকে পিঁড়ি দিয়ে মারেন বাবা। আর সেই ভুলেই মানসিক ভারসাম্য হারান রাশিদুল। সব ভুলে পথকে সঙ্গী করেছেন তিনি; কিন্তু এখনো ভুলে যাননি পবিত্র কুরআন।

জানা যায়, আশির দশকের শেষ ভাগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ভিটেমাটি ভেঙে উলট-পালট করে দেয় সর্বনাশী তিস্তা। ভাঙনের কবলে পড়ে জীবিকার তাগিদে এলাকা ছাড়েন জবেদ। সঙ্গী হন স্ত্রী রাশেদা ও রাশিদুলসহ ৩ শিশুসন্তান। কাজের সন্ধানে যান শহরে।

রিকশা চালিয়ে দুঃখ-কষ্টে দিন গেলেও বাবা জবেদ আলী ও মা রাশেদা বেগম রাশিদুলসহ ৩ ছেলেকেই ভর্তি করিয়েছিলেন সেখানকার একটি হাফেজি মাদ্রাসায়। তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলেদের হাফেজ বানানোর। বাবা-মায়ের সেই স্বপ্নপূরণে কয়েকপারা কুরআনও মুখস্ত করেছিলেন রাশিদুল।

একদিন সকালে বাসায় দুষ্টুমি করছিল ছোট্ট রাশিদুলসহ অপর দুই ভাই। ছেলের দুষ্টুমি সইতে না পেরে রাশিদুলের পিঠে পিঁড়ে দিয়ে আঘাত করেন বাবা; কিন্তু পিঠে না লেগে মাথায় লাগে তা। বাবার সেই সামান্য ভুলই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ছেলের জীবনে। চিকিৎসা করালেও মানসিক ভারসাম্য হারান রাশিদুল। পরে পাঠানো হয় পাবনা মানসিক হাসপাতালেও। সেখানে কয়েক মাস চিকিৎসার পর ভালো হয়ে যান তিনি। ওষুধ সেবন করালে ভালো থাকে, সেবন বন্ধ করলে দেখা দেয় আবার ভারসাম্যহীনতা।

সরেজমিন দেখা যায়, ভারসাম্যহীন রাশেদ ফজরের নামাজের পর যখন যেখানে পারেন বসে যান সঙ্গে থাকা একটি ছেঁড়া কুরআন নিয়ে। তার সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের বাণী শুনে মুগ্ধ হন সবাই।

মীরগঞ্জ বাজারের পূর্বধারে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস তার। ভেতরে থাকা টেবিলে রাখা আছে সেই কুরআন। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি রাস্তাই যেন ঠিকানা তার। যত রাতেই বাড়িতে ফিরুক না কেন মায়ের রেখে দেওয়া খাবার খেয়ে আবার কুরআন পড়া শুরু করেন তিনি। পাঠ শেষে ছেঁড়া মশারির ভেতর ঘুমিয়ে পড়েন পবিত্র কুরআনের এই প্রেমিক।

রাশিদুল ভারসাম্যহীন হলেও কারো কোনো ক্ষতি করে না জানিয়ে তার ছোট ভাই মাসুদ বলেন, আমার বড় ভাই রাশিদুলের এ দুরবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয়। তার চিকিৎসা করানোটাও জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে তা করতে পারছি না।

ছেলের এমন ভারসাম্যহীনতায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ মা রাশেদা বেগম। তিনি বলেন, নদী ভাঙনের পর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে যাই। সেখানে ৩ ছেলেকে হাফেজি পড়তে দেই। একদিন মারামারি করছিল ৩ ভাই। ওর বাবা দুষ্টুমি সইতে না পেরে পিঁড়ি দিয়ে আঘাত দেয় রাশিদুলকে। সেই থেকে তার এই অবস্থা; কিন্তু পয়সার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না ঠিকভাবে।

আগের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পাবনা মানসিক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মাসুদ রানা সরকার। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা কখনো বন্ধ করা যাবে না।

আর্থিক সহায়তা পেলে হয়তো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন ও সেবাযত্ন পেলে সুস্থ হবেন তিনি। সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করবেন কুরআন, শেখাবেন অন্যদেরও- এমন প্রত্যাশা অনেকের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ