১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার শপথগ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের দিকে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এই ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভিডিওটি ৩.৮ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে এবং তাতে ২০ হাজার মানুষ মন্তব্য করেছেন।
উক্ত ভিডিওতে দেখা যায়, মাস্ক পরা ৩০-৩৫ বছর বয়সী একজন যুবক তার সামনে দাঁড়ানো ৪০-৫০ জন নেতাকর্মীকে শপথ পড়াচ্ছেন। তার পেছনে একটি ব্যানারে লেখা রয়েছে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। ব্যানারের নিচে আরো লেখা রয়েছে, শরীফ আহমেদ এমপি, তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ, ময়মনসিংহ।
তবে এই শপথ অনুষ্ঠানটি কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সে ব্যাপারে ময়মনসিংহের পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি, পাওয়া যায়নি কোনো সঠিক তথ্য।
শপথ অনুষ্ঠানে বলতে শোনা যায়, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আজ ১৫ আগস্ট। বাঙালি জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে আমি শপথ করিতেছি যে, লুটপাটকারী, প্রতারক, বাটপার, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, রাজাকার ইউনূস গংদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে বাংলাদেশের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মানবতার মা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপাকে ফিরিয়ে আনতে ময়মনসিংহ-২ ফুলপুর ও তারাকান্দা আসনের সাবেক মাননীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী জনাব শরীফ আহমেদ এমপি মহোদয়ের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে এবং সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ফিরিয়ে আনবো ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ ভিডিওর ব্যাপারে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান সমকালকে বলেন, ভিডিওটি ছাড়ার পর থেকে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়েছি। এটি তারাকান্দা উপজেলার কোনো স্থানে নয়। ভিডিওতে যে লোকেশন দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এটি হাওর অঞ্চলে কোনো রিসোর্টে এই ভিডিওটি করা। এমন কোন স্থাপনা তারাকান্দায় নেই।
এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাদী জানান, এই ভিডিওটি ফুলপুর উপজেলার কোনো স্থানে করা হয়নি। প্রশাসন এ ব্যাপারে নজরদারি রাখছে। ভিডিওতে যে সকল যুবকদের দেখা গেছে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে, ফুলপুর এলাকার কোনো ব্যক্তি এই ভিডিওতে থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তারাকান্দা এবং ফুলপুরের ওসি নিশ্চিত করেছেন, ঘটনাস্থলটি ময়মনসিংহের নয়। তবে ভিডিওতে থাকা মানুষগুলো এই অঞ্চলের হতে পারে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার সমকালকে জানান, ভিডিওর ঘটনা নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছে। সব জায়গায় লোক লাগানো হয়েছে। পুলিশের সাথে আমরাও খোঁজ খবর নিচ্ছি। আশা করি দ্রুতই তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।