সাতক্ষীরায় শফিকুর রহমান নামের এক স্কুলশিক্ষককে মারধরের পর গলা ধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
শফিকুর রহমান ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতারা এমন কাণ্ড ঘটান বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও অপর একটি পক্ষের দাবি প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে জামায়াত ও বিএনপিপন্থী দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বের জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষর্শীরা জানান, রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বল্লী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গনি ও বিএনপি কর্মী ইউপি সদস্য রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এসময় তারা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে সহকারী শিক্ষক শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তোলেন। ১৬ আগস্ট দোতলার একটি কক্ষে তিনি দীর্ঘ সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে গল্প করেছিলেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয় থেকে ওই শিক্ষককে বিতাড়িত করার আহ্বান জানান বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এসময় প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত শফিকুর রহমানের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে নিয়ে পাশের বল্লী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা দলবদ্ধভাবে পরিষদে গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষককে উদ্ধার করে বিদ্যালয়ে আনেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজনের দাবি, প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী দুই শিক্ষকের দ্বদ্বের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক শফিকুর রহমান বর্তমান দায়িত্বে থাকা জামায়াতপন্থী প্রধান শিক্ষকের অনুসারী। ফলে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে এমন ঘটনা ঘটায়। এসময় উত্তেজিত জনতার মধ্যে ছাত্রদল নেতা রাশেদুজ্জামানসহ তার অনুসারীরা ছিলেন।
বিএনপি কর্মী ইউপি সদস্য রবিউল ইসলামের ভাষ্য, শিক্ষক শফিকুর রহমান গতকাল একটি মেয়েটির সঙ্গে অনৈতিক কর্মে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে ধরে ফেলে। এর আগেও এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি ঘটনায় তদন্ত হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল, অভিযুক্ত শিক্ষক কোনো মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। কিন্তু এখনও সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। অথচ আবারও একই ঘটনায় ধরা পড়েছেন তিনি।
তিনি আরও দাবি করেন, গত ২৬ মে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে মারধরের শিকার শিক্ষক শফিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন শিক্ষার্থীরা আমাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছিনিয়ে এনেছে।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ে এসে ঘটনাটি শুনেছি। তবে লিখিত বা মৌখিকভাবে কোনো অভিযোগ পাইনি। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে অবশ্যই শোকজ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষককে এভাবে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া একেবারেই অপ্রত্যাশিত এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।’