উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ভাইবোন নাজিয়া ও নাফির। ১২ বছরের নাজিয়া এবং ৮ বছরের নাফি—দুজনই একই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। সোমবার দুপুরে ছুটি শেষে বড় বোন নাজিয়াকে আনতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে ছোট ভাই নাফি।
পরিবার জানায়, শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নাজিয়াকে যখন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাওয়া যায়, তখন সে বারবার জিজ্ঞেস করছিল, “আমার ভাই কেমন আছে?” হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়ও ভাইয়ের খোঁজে চোখ মেলে রেখেছিল সে। সোমবার ভোররাতে মারা যায় নাজিয়া।
তবে ট্র্যাজেডি এখানেই শেষ নয়। ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ছোট ভাই নাফি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে। বুধবার দুপুরে তার মরদেহ বাসায় এলে সংক্রমণের আশঙ্কায় অন্তঃসত্ত্বা মা তাহমিনাকে ছেলেকে শেষবার চুমু দিতেও বাধা দেওয়া হয়।
মা তাহমিনা তখন প্রায় নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দুর্ঘটনার সময় তিনি ছিলেন স্কুলের বাইরে, কিন্তু সন্তানদের খুঁজে পেতে বহু সময় লেগে যায়। বার্ন ইউনিটে তাদের খুঁজে পাওয়ার আগে আতঙ্ক আর অশ্রুতে ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
নাজিয়ার খালা তানজিনা আখতার জানান, প্রথমে নাজিয়াকে দেখেও চিনতে পারেননি তারা। পরবর্তীতে নাজিয়া হাত তুলে খালাকে ডাকে এবং তখনই পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন যে সে-ই নাজিয়া।
হাসপাতালে উপস্থিত এক খালাতো ভাই বলেন, নাজিয়ার যন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ। ডাক্তাররাও বলছিলেন—“দোয়া করুন, যেন ও তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারে, এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।”
মঙ্গলবার জানাজা শেষে নাজিয়াকে দাফন করা হয় রাজাবাড়ি দক্ষিণপাড়া কবরস্থানে। ঠিক তার পাশেই বুধবার সন্ধ্যায় সমাহিত করা হয় ছোট ভাই নাফিকে।
বাবা আশরাফুল ইসলামের জন্য এটি ছিল সবচেয়ে দুঃসহ অধ্যায়। একদিনের ব্যবধানে দুই সন্তান হারিয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। দু’বার সন্তানের মরদেহ কাঁধে নিয়ে যেতে হয় তাকে—যা ছিল সহ্যের বাইরে।
ভাইবোনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পুরো রাজাবাড়ি এলাকা। স্কুল ও পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।