লালমনিরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আকস্মিক ও শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে অন্তত পাঁচটি উপজেলার ১৫টিরও বেশি গ্রাম। মধ্যরাতের পর আঘাত হানা এই ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চরাঞ্চলগুলোতে। উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা, ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি এবং গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ ঝড়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঝড়ের তাণ্ডবে জেলার বিভিন্ন এলাকার, বিশেষ করে তিস্তা ও ধরলা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের কৃষকদের স্বপ্ন যেন এক রাতেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মাঠে মাঠে দোল খাওয়া উঠতি ভুট্টাখেত ঝড়ের দাপটে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। অনেক গাছের ভুট্টা মোচা ভেঙে গেছে, যা আর তোলার উপযোগী নেই। কৃষকরা জানান, আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই এই ভুট্টা ঘরে তোলার কথা ছিল। কিন্তু কালবৈশাখীর আঘাতে তাদের মাথায় হাত। শুধু ভুট্টাই নয়, ঝড়ে কিছু সবজি খেতেরও ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। আকস্মিক এই ক্ষতির মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা, অনেকেই ধারদেনা করে ফসল বুনেছিলেন।
এদিকে ঝড়ের তীব্রতায় জেলার বিভিন্নস্থানে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কে। আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি এলাকায় একটি বিশাল গাছ মূল সড়কের ওপর ভেঙে পড়লে গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। রাতের আঁধারে এবং ভোরের দিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরগামী পণ্যবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার বাস এবং অন্যান্য জরুরি যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী দল। তাদের সাথে যোগ দেন স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ। প্রায় চার ঘণ্টার নিরলস প্রচেষ্টায় ভারী গাছটি কেটে সরিয়ে মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী করা হয়। ততক্ষণে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
এছাড়া কালবৈশাখীর ছোবলে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাতাসে বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে, আবার কোথাও কোথাও তার ছিঁড়ে গেছে। এর ফলে আদিতমারী, কালীগঞ্জ, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা রাত থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রোববার দিনভর বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা সংযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ করলেও অনেক এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে মানুষের কষ্ট বেড়েছে, ব্যাহত হচ্ছে সেচসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম।
ঝড়ের তাণ্ডবে জেলার বিভিন্ন গ্রামের, বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকার বহু কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেকের ঘরের চালা উড়ে গেছে, ভেঙে পড়েছে মাটির দেওয়াল। ঝড়ের সময় আতঙ্কিত মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটোছুটি করেন। বেশ কিছু পরিবার আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ শুরু করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।