রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে আজ। এক যুগ পার হলেও গাইবান্ধায় হতাহতদের পরিবারের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অঙ্গ ও চাকরি হারিয়ে অনেকেই কষ্টে জীবন যাপন করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। এতে জেলার নারীসহ ৪৯ জন নিহত হন। ওই সময় ১১ জন নিখোঁজ হন। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনায় অনুদান হিসেবে তিন দফায় হতাহতের পরিবারকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এরপর গত ১২ বছরে আর কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।
রানা প্লাজা ধসে জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের সায়েব মণ্ডলের মেয়ে সোনিয়া বেগমের (২৮) অবস্থা করুণ। ২০১১ সালে পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের নজির উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। জীবিকার তাগিদে বিয়ের পর দুজন ঢাকায় যান। সেখানে তারা রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। চাকরি নেওয়ার মাত্র ২২ দিনের মাথায় ভবন ধস হয়। এতে সোনিয়া বেগম গুরুতর আহত হন। তার স্বামী মিজানুর রহমান অন্য কাজে বাইরে থাকায় তিনি বেঁচে যান।
সোনিয়া বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন ভবনটির সাত তলায় আটকা পড়ি। কিছু বুঝার আগেই হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয়। পরে ভবনটি ধসে পড়ে। নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় আমার ডান পা ভবনের একটি পিলারের নিচে চাপা পড়ে। পরে এনাম হাসপাতালে আমার ডান পা কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়।
ঘটনার পর সরকার ১০ লাখ টাকা অনুদান দেয়। ওই টাকা থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে লাভ পাচ্ছি। এই টাকায় এখনো চিকিৎসা ও সংসার চালাতে হচ্ছে। সরকার আমার স্বামীকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কোনো চাকরি দেওয়া হয়নি।’
এদিকে রানা প্লাজার ভবন ধসে নিহত পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন হয়নি। এর মধ্যে সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া গ্রামের স্মৃতি রাণীর (২৭) পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। স্মৃতি রাণীর চাকরির টাকায় তাদের সংসার চলত। কিন্তু তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর ১২ বছরেও তাদের আর কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের দিনমজুর ওয়াহেদ আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (২০) ভবন ধসের ঘটনায় নিহত হন। তার পরিবারের অবস্থাও একই রকম।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’