রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক মৎস্যচাষীর পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে বিপুল পরিমাণ মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষী মোঃ মোসলেম মোল্লা এ বিষয়ে প্রতিবেশী তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ (এজাহার) দায়ের করেছেন।
ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতের কোনো এক সময়। পরদিন বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে মৎস্যচাষী মোসলেম মোল্লা প্রতিদিনের মতো মাছের খাবার দিতে গিয়ে দেখতে পান, পুকুরের মাছগুলো পানিতে ভেসে উঠেছে এবং পুকুরের পানি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুপুরের মধ্যেই পুকুরের প্রায় অনেক মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে প্রায় ৫৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
মোসলেম মোল্লা জানান, প্রায় আট মাস আগে তিনি তার বাড়ির পাশে একটি পুকুরে বিভিন্ন জাতের প্রায় পাঁচ মণ মাছের পোনা ছাড়েন। পরিকল্পনা ছিল মাছগুলো শিগগিরই বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক সঙ্কট দূর করবেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী মুন্নু মিয়া (৬০), তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫৩), ও মেয়ে মনিষা আক্তার (২৫)-এর সঙ্গে তার জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে সেই বিরোধ ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
মোসলেম মোল্লার আরোও জানান , ঘটনার আগের দিন (১২ আগস্ট) বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে তার স্ত্রী মোছাঃ শিউলি বেগম পুকুরপাড়ে অবস্থানকালে অভিযুক্তদের মুখে বিভিন্ন হুমকিমূলক কথা শুনতে পান। তারা তখন পুকুরের মাছ মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। পরদিন সকালেই বিষক্রিয়ায় মাছ মারা যাওয়ায় তিনি মনে করছেন এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা।
এজাহারে মোসলেম মোল্লা উল্লেখ করেন,
আমাদের দীর্ঘদিনের জমি বিরোধের জের ধরেই তারা এ কাজ করেছে। কিছুদিন আগেও আমাকে নারী নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হয়েছিল। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মুন্নু মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, এই কাজ আমরা করিনি। আমাদের বাড়ি পুকুরের পাশে হলেও, কে করেছে তা জানি না। তদন্ত করে দেখুন।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মোসলেম মোল্লা বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন। তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার পর দুর্গাপুর গ্রামে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘কঠিন হৃদয়হীনতা’ বলে অভিহিত করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ বিষয় নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা এবং মানবাধিকার প্রেসক্লাব এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি পরিবেশ ও সমাজের শান্তির জন্যও হুমকিস্বরূপ। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জমি বা সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিরোধের দ্রুত ও সুষ্ঠু সমাধান না হলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তারা মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং কমিউনিটির মধ্যে কার্যকর মিডিয়েশন (মধ্যস্থতা) প্রক্রিয়া চালু করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।