শিরোনাম
গাজায় একদিনে প্রাণ গেল ৭২ জনের, মোট নিহত ছাড়াল ৫৬ হাজার ৩০০ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৪ রংপুরে বাড়ছে জলাতঙ্কে আক্রান্তের সংখ্যা, মিলছে না প্রতিষেধক টিকা সকল ইসলামী শক্তির মধ্যে সমঝোতা হতে যাচ্ছে : গোলাম পরওয়ার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলাকে কেন্দ্র করে প্রাথমিকে পড়া বন্ধুর হাতে আরেক বন্ধু খুন হিলি সীমান্ত দিয়ে দুই বাংলাদেশী নাগরিককে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ  আমি মেয়র হিসেবে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করব’ বলে হুঁশিয়ারি দিলেন মামদানি অবৈধ সরকারের ৩০০ এমপির বিরুদ্ধে একাই লড়াই করেছি: রুমিন ফারহানা
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন

রংপুরে বাড়ছে জলাতঙ্কে আক্রান্তের সংখ্যা, মিলছে না প্রতিষেধক টিকা

স্থানীয় রিপোর্ট / ৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

রংপুরে জলাতঙ্কে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই রোগ প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের প্রতিষেধক টিকা পেতেও বেড়েছে দুর্ভোগ। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এই টিকার অন্যতম প্রাপ্তিস্থান হলেও সেখানে সরবরাহ না থাকায় আপাতত কার্যক্রমটি বন্ধ রয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ৪২৪ জন টিকা নিয়েছেন। জেলায় বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকার অন্যতম প্রাপ্তিস্থান সিভিল সার্জনের কার্যালয়। তবে সরবরাহ না থাকায় কার্যক্রমটি বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শুরু হবে সেটাও নিশ্চিত না। বাধ্য হয়ে অনেকেই সিটি করপোরেশন বা বাইরে থেকে এই রোগের প্রতিষেধক গ্রহণ করছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বাদুড়, বেজি, বানর ইত্যাদি প্রাণী জলাতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এবং আক্রান্ত প্রাণিটি সুস্থ মানুষ বা গবাদিপশুকে কামড়ালে ওই মানুষ কিংবা গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। তবে আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক রোগ হয় কুকুরের কামড়ে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এ রোগে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকাও রয়েছে, যা রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই শরীরে প্রয়োগ করতে পারলে মৃত্যু এড়ানো যায়।

 

ঈদের আগে হঠাৎ চিকার কামড়ে ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ৯ বছরের শিশু ফারহানা জামান ফুল। তাৎক্ষণিকভাবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টিকার জন্য গিয়ে ফেরত আসতে হয় তার বাবাকে। পরে সিটি কর্পোরেশন থেকে ১৪০ টাকা মূল্যে তিনটি টিকার ছয় ডোজ দেয়া হয় ওই শিশুকে।

রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুজিনা জামান রোজ বলেন, রাতে রাস্তা দিয়ে আসার সময় তার মেয়েকে একটি চিকা কামড় দেওয়ায় পায়ের আঙ্গুল থেকে রক্ত বের হয়। আমরা পরের দিন সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বিনামূল্যের টিকা না পেয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে টিকা নিয়েছি।

দিনমজুর আফজাল হোসেন, দেলোয়ার মিয়া ও লায়লা বেগম সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে এসেছিলেন টিকা নিতে। তাদের কেউ কুকুরের কামড় অথবা বিড়ালের আঁচড়ের শিকার হয়েছেন। তবে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। পরে তারা যান সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের টিকাদান শাখার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছে, ঈদুল আজহার আগে ও পরে জলাতঙ্ক রোগের টিকার চাহিদা বেড়েছে।

সেখানকার দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ শরিফা বেগম জেবা বলেন, আমাদের কেন্দ্র শুধু ঈদের দিন বন্ধ ছিল। এছাড়া প্রতিদিনই খোলা থাকে। টিকা নিতে আসা রোগীদের চাপ আগের তুলনায় বেড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই বেশি।

তিনি আরো জানান, গত মে মাস এবং চলতি জুনের ২৬ তারিখ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ৬০০ জনকে জলাতঙ্কের টিকা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে বিড়ালের আঁচড় কিংবা কামড়ে আহতের সংখ্যা বেশি।

রংপুর এনিমেল রেস্কিউ অ্যান্ড এডপশন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা মুনতাসির সজীব বলেন, জলাতঙ্ক যে শুধু কুকুর বা বিড়ালের মাধ্যমে ছড়ায়, ব্যাপারটা এমন নয়। ইঁদুর, চিকা, শিয়াল, খরগোশসহ অন্যান্য প্রাণির মাধ্যমেও ছড়ায়। যেহেতু কুকুর ও বিড়াল মানুষের কাছাকাছি অবস্থান করে, সেক্ষেত্রে পোষা কুকুর বা বিড়ালের র‌্যাবিসের পাশাপাশি পথকুকুর ও বিড়ালের টিকা জরুরি। আমরা রংপুরের বিভিন্ন মহল্লায় কুকুরের বন্ধ্যত্বকরণ ও টিকা প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, রংপুরকে জলাতঙ্ক ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখতে শহরের প্রতিটি এলাকার কুকুরগুলোকে টিকার আওতায় আনা জরুরি। রংপুর সিটি কর্পোরেশনে এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা আমরা এরই মধ্যে জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো সাড়া পাইনি। কর্মপরিকল্পনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে বন্ধ্যত্বকরণ, টিকার ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা ক্যাম্পেইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. পলাশ কুমার রায় জানান, জলাতঙ্ক রোগ হয় র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কিছু প্রাণীর কামড় কিংবা আঁচড়ে। এসব প্রাণীর মধ্যে কুকুর ও বিড়াল দ্বারাই বেশি আক্রান্ত হয় মানুষ। বিড়ালের কামড় বা আঁচড়েও আক্রান্তের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়া শেয়াল, বানর, নেকড়ে, বাদুড়, ইঁদুর, চিকা, কাঁঠবিড়ালি, বেজি, বনবিড়ালের কামড় ও আঁচড় থেকেও হতে পারে জলাতঙ্ক।

তাই কুকুর ও বিড়ালের মতো পোষাপ্রাণীর ক্ষেত্রে সচেতনতা থাকতে হবে। জনসচেতনতা বাড়লে অনেকাংশে জলাতঙ্কে আক্রান্তের হার কমতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে বিনামূল্যে শুধুমাত্র সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। রংপুর সিটি কর্পোরেশন ১৪০ টাকা মূল্যে এই টিকা প্রদান করে থাকে। মূলত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি থেকে সিটি কর্পোরেশন জলাতঙ্কের টিকা ক্রয় করে রোগীদের প্রদান করে।

প্রতিমাসে সাড়ে চারশ থেকে ৫০০ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়।

এদিকে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, টিকার স্টক শেষ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা তাকে সঠিক সময়ে বিষয়টি জানায়নি। এখন সরবরাহ আসার পর পুনরায় টিকাদান কার্যক্রম চালু হবে। বর্তমানে হাতে যে সামান্য টিকা রয়েছে, তা রাখা হয়েছে শুধু ভিআইপি সার্ভিসের জন্য। প্রতি মাসে অন্তত ২৫০ জনকে জলাতঙ্কের টিকা দেয়া হয়।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু ছাঈদ বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে কুকুর দমনে কোনো কার্যক্রম নেই। তবে সম্প্রতি কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে রংপুর সিটি কর্পোরেশনকে একটি কর্মপরিকল্পনা দেয়া হয়েছে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণে কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমসহ এ ধরনের কোনো কার্যক্রম চালু আছে কিনা জানতে চাইলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী উম্মে ফাতিমা বলেন, বর্তমানে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম চালু নেই। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করলে আমরা এ ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত। আক্রান্তরা যাতে সব সময় টিকা পান এজন্য মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ