ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেছেন রংপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা। রোববার (২৫ মে) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির ১নং সংগঠক তৌফিক আহমেদ হৃদয় পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, সংগঠনের অভ্যন্তরে চাঁদাবাজ-দালালদের দাপট ও অপকর্মের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চরম নজরদারিহীনতাকে মূল কারণ উল্লেখ করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এই সংগঠক।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তৌফিক আহমেদ হৃদয় লেখেন, ‘৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী সরকারের পতন আমরা এক ধরনের বিজয় ধরে নিই, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়-এই বিজয় ক্ষণস্থায়ী। তখন থেকেই আন্দোলনের গায়ে রাজনীতির দংশন পড়তে শুরু করে। ৭ আগস্ট প্রথম কমিটি বানানোর প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে ‘জুলাই’ হারিয়ে যেতে থাকে। আমি ঐদিন ফেসবুকে লিখি-আপনারা ছাত্রলীগ বিদায় করে নিজেরাই ছাত্রলীগ হয়ে উইঠেন না।
দুঃখজনকভাবে বৈছাআ যেই প্ল্যাটফর্ম আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিমসহ হাজার শহীদ ও আহত যোদ্ধার রক্তের ঋণে গড়া তা দ্রুতই একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর হাতে বন্দি হয়ে পড়ে। যেসব সদস্য আন্দোলনেই ছিল না, যারা হঠাৎ আকাশ থেকে নেমে আসে কোনো এক অজানা জাদুর বলে তারাই রাতারাতি আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব হয়ে ওঠে। কোনো রকম স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়াই হাস্যকর এই কমিটি প্রথম থেকেই শহরজুড়ে শিক্ষার্থী মহলে অবাঞ্ছিত ঘোষিত হয়। বিশেষ করে রংপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
বৈছাআ এর নিয়ম অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে সদস্যপদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এরপরও কিছু রাজনৈতিক দলের গোপন কর্মী, আওয়ামীপন্থি গুপ্তচর, সাবেক গণঅধিকার পরিষদের সিন্ডিকেট রংপুরের কমিটি দখল করে নেয়। এইভাবে সাধারণ ছাত্রজনতার আন্দোলন একটি পকেট কমিটিতে রূপান্তরিত হয়।
আমার অবস্থান ছিল শুরু থেকেই স্পষ্ট। যতক্ষণ পেরেছি আমি এসব দালালচক্র ও অপকর্মের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সংগঠন যখন কেন্দ্রীয়ভাবে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়, তখন আর আমার হাতে তেমন কিছু ছিল না। এসব দেখে দ্রুতই আমি নিজেকে সরিয়ে নিই, নীরব পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকি। আমি অপেক্ষা করছিলাম, কবে এই বিশ্বাসঘাতকতাগুলোর মুখোশ উন্মোচিত হবে। এখনো অনেক কিছু আসেনি, তবে আমি আশাবাদী একদিন সব বেরিয়ে আসবে।
আজ আমি তীব্র ক্ষোভ ও গভীর ঘৃণা নিয়ে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির ‘১নং সংগঠক’ পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করছি। আজ ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে আমার এই সিদ্ধান্ত, যেন কেউ না ভাবে আমরা সবাই নীরব ছিলাম।
যারা আন্দোলনের রক্ত দিয়ে কেনা ব্যানারকে মামলা বাণিজ্য-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-সরকারি অফিসে দালালি ও ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি বানিয়েছে, তাদের বিচারও একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। যারা শহীদের রক্তকে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত জুলাই চলবে। আমরা জান দিবো, জুলাই দিবো না।’
এ বিষয়ে তৌফিক আহমেদ হৃদয় গণমাধ্যমে বলেন, লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার নিয়ম সংগঠনে নেই। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিডিয়া গ্রুপ থেকে আমাকে রিমুভ করে দেওয়া হয়েছে। একজন জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আমাকে মিডিয়া গ্রুপ থেকে রিমুভ করে দিতে তারা পারেন না।
বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
এর আগে গত ১৮ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে একযোগে ১৬ জন পদত্যাগ করেন।